করোনা ভাইরাসের কারনে বিশ্বব্যাপী লক ডাউন চলছে। বাংলাদেশর অবস্থাটিও অভিন্ন। লক ডাউন ঘোষনার পর থেকেই আলোচনা চলছে দেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলির কি হবে। সেই ভাবনা মাথায় রেখে সরকার সর্বোচ্চ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করেছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য। সুষ্ঠভাবে বিতরন হলে এই অর্থেই দেশের মানূষ আরও কিছুদিন ঘরে থাকতে পারত। কিন্তু বাংলাদেশের ধনী মানুষগুলির টাকার প্রয়োজন বেশী, আরো চায় তারা। যথারিতি চুরি আর অনিয়ম করেও লুট করেছে সরকারের দেওয়া অনুদান। রিলিফ এলেই মল্লযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় কে কার আগে নিবে আর কতবার নিবে। প্রকৃত প্রাপকরা সামনেও আসতে পারেনা, দুর্বলরা পিছেই থেকে যায় সর্বকালে।
লক ডাউন খুলে দেয়নি কোথায়ও এখনো। কিছু শহর আর দেশ শর্তভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে কেবল। বাংলাদেশ ঘনবসতির দেশ, এখানে সামাজিক দুরত্ব শিথিল হলে সংক্রমনের ঝুঁকিটি বাড়বে। উন্নত দেশে মানুষ বের হলেও নীজের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিষেধাজ্ঞা মান্য করেই বের হয়। ভয় হয়, বাংলাদেশের মানুষ কতটা সচেতন হতে পেরেছে। অনেক দেশে নতুন সংক্রমনের সংখ্যা কিছুটা কমেছে কিন্তু মৃতের সংখ্যাটি বেড়েছে। তার মানে দাড়ায় সংক্রমিত হলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ কারন, কোন ঔষুধ উদ্ভাবন করা যায়নি এখনো। বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষাকেন্দ্রও পর্যাপ্ত নয়। করোনায় আক্রান্ত রোগী/রোগীনিকে ভেন্টিলেশন দেওয়ারও উপযূক্ত ব্যবস্থা নেই। এমন বাস্তবতাকে সামনে রেখে যারা শপিং মল বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন, ভুল করেছেন। মৃত্যু অর্থকষ্টের চেয়েও ভয়ংকর। মানূষ সচেতন হলে আর একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে এলে, এর চেয়ে বড় দুর্যোগও মোকাবেলা করা সম্ভব। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হলে মৃত্যু অনিবার্য, আল্লাহ ছাড়া কেউ রক্ষা করতে পারবেনা। আমাদেরকেই বুঝতে হবে কোনটা বেশী জরুরী, জীবন না মানবতা? একদিকে নিম্ন আয়ের মানুষের দুঃখ কষ্ট আন্যদিকে মৃত্যু ভয়। কোনটাকেই অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। এমন বাস্তবতা মোকাবেলা করতে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্যের। সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই কেবল করোনার সংক্রমন নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। এই মহামারিকে পুঁজি করে রাজনীতি করা দেশদ্রোহিতার সামিল। যারা সরকারের সমালোচনা করতে নিত্য ভুল খুঁজেন তারাও এই ঝুঁকির বাইরে নন। দেশের মানুষ বাঁচলে রাজনীতি করা যাবে, এই মুহুর্তে জাতীয় নেতাদের উচিত হবে জীবন রক্ষার পরামর্শ দেওয়াই । যারা চুরি করে তারা শুধুই চোর, তাদের দলীয় পরিচয় বিবেচ্য নয়। কোনদলই চোরমূক্ত নয়। চোর মূক্ত দেশ গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে বিবর্তনের রাজনীতি প্রয়োজন দেশে। দলকেই চোরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে এখন। আজ দেশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, ভবিষ্যতে অন্যকোন সংক্রমন দেশে হবেনা নিশ্চিত করে বলা যাবেনা। আসুন সকলে মিলে দেশ রক্ষা করি আর জীবন বাঁচাই। বেঁচে থাকলে ঈদ আসবে আরও, ব্যবসাও হবে কিন্তু, ঈদের উম্মাদনায় নিজের এবং অন্যের জীবনের ঝুঁকি নেওয়া অনুচিত হবে।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
১০ মে ২০২০।