মাগুরা জেলা প্রতিনিধি :-
( এইচ.এম রাজিব )
অনুমোদিত নকশা বাদ নিয়ে মাগুরার শ্রীপুরে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে আশ্রায়ন প্রকল্পের ৫শ ৩৬টি ঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে দরিদ্র পরিবারের মধ্যে বরাদ্দকৃত ওইসব ঘরের স্থায়ীত্ব এবং নির্মাণ কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অন্যদিকে টিনের পরিবর্তে ইটের ঘর পেলেও প্রতিটি পরিবারের মধ্যেই চলছে অসন্তোষ।
২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর অধিন “যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ” উপখাতের আওতায় মাগুরার শ্রীপুর উপজেলাতে ৭শ ৪৪টি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। যেখানে পাকা মেঝে, ২১টি কংক্রিট ঢালাইয়ের পিলার, চতুর্দিকে টিনের বেড়া এবং চালযুক্ত ল্যাট্রিনসহ একেকটি ঘরের অনুকুলে ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। প্রকল্পের শর্তানুযায়ী গত বছরের শেষদিকে এ উপজেলায় ২শ ৮টি ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে ওইসব ঘরে সুবিধাভোগিরা বসবাস শুরু করেছেন। কিন্তু ওই উপজেলার বর্তমান নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান অনুমোদিত নকশা বাদ নিয়ে নিজ উদ্যোগে বাকি ৫শ ৩৬ টি ঘরের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছেন। যেটি করতে গিয়ে নানা অনিয়মের আশ্রয় নিতে হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী দিলীপ কুমার কর্ম্মকার বলেন, ইটের গাঁথুনিযুক্ত ঘরের স্থায়ীত্ব রক্ষায় অবশ্যই সেখানে লিনটেল এবং ফাউণ্ডেশন থাকা উচিত। অন্যথায় দূর্যোগ দূর্বিপাকে দূর্ঘটনার ঝুকির সম্ভাবনা থেকে যায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদিত নকশা কীভাবে বাতিল হলো সে বিষয়ে কিছু জানি না। আমি কমিটিভূক্ত সদস্য হলেও এ বিষয়ে আমার কোন মতামত নেয়া হয়নি।
সরজমিনে শ্রীপুর উপজেলার মাশালিয়া, গয়েশপুর, নবগ্রাম, ইছাপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রতিটি ঘরের চতুর্দিকে টিনের পরিবর্তে ৫ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনি দেয়া হয়েছে। কিন্তু রাখা হয়নি কংক্রিট পিলার। দেয়া হয়নি ফাউণ্ডেশন এবং লিনটেল ঢালাই। অনেকক্ষেত্রেই টিনের পুরুত্ব কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে। ঘর নির্মাণের মালামাল পরিবহন এবং বালু ক্রয়ের খরচ পরিশোধ করতে হয়েছে দুস্থ পরিবারগুলোকে।
কুশা ইছাপুর গ্রামের রইস শেখের স্ত্রী শাহিনা বেগম বলেন, সরকারি খরচে ঘর দেয়ার কথা। কিন্তু ঘর পেতে আমি ছাগল বিক্রি করে তিন হাজার টাকা দিয়েছি। তারপরও টিন, সিমেন্টসহ অন্যান্য মালামাল আমাকে খরচ করে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ থেকে আনতে হয়েছে। বালি কিনে দিতে হয়েছে এক গাড়ি।
নবগ্রামের আনোয়ারা বেগম বলেন, টিনের ঘরের চেয়ে ইটের দেওয়াল ভাল। কিন্তু প্লাস্টারে করবো কীভাবে। দ্ইু গাড়ি বালি কিনে দিয়েছি তাতেই অনেক টাকা চলে গেছে।
মাশালিয়া গ্রামের নারগিস বেগম জানান, পরের বাড়ি কাজ করে খাই। ঘরের বালি কেনা, মালামাল আনা সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এই টাকা না দিতে হলে সংসারের কাজে লাগাতে পারতাম। একই রকম অভিযোগ শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের আরো অনেকেরই।
শ্রীকোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুতাসিম বিল্লাহ সংগ্রাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের না জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একক সিদ্ধান্তে কাজটি করতে গিয়ে সরকারের একটি ভাল কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। ঘর পাওয়ার জন্যে যোগ্য ব্যক্তিরা যেমন বঞ্চিত হয়েছে তেমনি অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিরাও ঘর পেয়েছেন।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান বলেন, টিনের ঘরের পরিবর্তে ইটের ঘর পেয়ে সকলেই খুশি হয়েছে। সেখানে নকশা বাতিল করতে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এই কাজে জমির মালিকদের অর্থ ব্যায় হয়েছে কিম্বা নিম্নমানের কাজ করা হয়েছে এমন কোন অভিযোগ আসেনি।
অন্যদিকে নকশা পরিবর্তনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রায়ন প্রকল্প-২ এর প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম শামসুদ্দিন (যুগ্ম সচিব) জানান, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা সবদিক বিবেচনা করেই নকশা তৈরি করেছেন। কিন্তু ১ লক্ষ টাকার মধ্যে ইটের ঘর তৈরি এবং স্থায়ীত্ব রক্ষা সম্ভব কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হবে।