দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ আসনে বেআইনিভাবে ভোট গণনা, ফলাফল বিবরণী প্রস্তুত ও একত্রীকরণ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে এ অভিযোগ দাখিল করা হয়। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহা রফিকুল ইসলাম।
অভিযোগে বলা হয়, বেআইনিভাবে ভোট গণনা, ফলাফল বিবরণী প্রস্তুত ও একত্রীকরণ প্রক্রিয়ায় নৌকা প্রতীকের উপস্থিত এজেন্টদের জোর আপত্তি উপেক্ষা করে আইনসংগতভাবে প্রস্তুত না করায় ফলাফলে ব্যাপক কারচুপি, অনিয়ম ও বেআইনি কার্যকলাপ হয়েছে। অভিযোগপত্রের সঙ্গে ১৮টি ফলাফল বিবরণীর অনুলিপি জমা দেওয়া হয়। অভিযোগ দাখিলের পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে অ্যাড. সোহরাব হোসেন মামুন বলেন, ‘জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগপত্রে সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে ফলাফল শিটে নৌকার এজেন্টদের স্বাক্ষর নেই। এজেন্টদের জোর আপত্তি উপেক্ষা করে আইনসংগতভাবে প্রস্তুত না করায় ফলাফলে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে।’
কোনো প্রার্থীর ওপরে ভোট কারচুপির অভিযোগ রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে নয়। কর্মকর্তারা ফলাফল বিবরণী প্রস্তুতে অনিয়ম করেছে।
এ সময় সেখানে নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু উপস্থিত থাকলেও তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।
সোহরাব হোসেন মামুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে সমাধান না পেলে পরবর্তীতে আমরা ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করব।’
অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা শতভাগ শান্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছি। কক্ষে সমস্ত প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার পর ভোট গণনা করা হয়। ভোট গণনার পর সেখানেই ফলাফল বিবরণী প্রস্তুত করে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘোষণা করে ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হয়। পরে সেগুলো সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে পেয়ে আমরা সমন্বিতভাবে ঘোষণা করে থাকি। হাজার হাজার মানুষের সামনে প্রকাশ্যে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষণার সময় কোনো প্রার্থী কোনো অভিযোগ করেননি। তবে আজ নৌকার প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, অভিযোগ পেয়েছি, আমরা খতিয়ে দেখব।’
ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বরগুনা-১ আসন থেকে পাঁচবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। একই সঙ্গে ৩৫ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর দখলে। হেভিওয়েট এই প্রার্থী এবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু তরুণ তুর্কি গোলাম সরোয়ার টুকুর কাছে রীতিমতো ধরাশায়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীও হতে পারেননি। বরগুনার আওয়ামী লীগের চার নেতার মধ্যে ভোটে তৃতীয় অবস্থানে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।
বরগুনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী শম্ভুর বিপরীতে তিনজন দলীয় প্রার্থী ছিলেন। সবাইকে ছাপিয়ে গোলাম সরোয়ার টুকু ঈগল প্রতীকে ৬১ হাজার ৭৪২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম ছরোয়ার ফোরকান। তিনি কাঁচি প্রতীকে ৫৭ হাজার ৮৭৪ ভোট পেয়েছেন। নৌকা প্রতীকে ধীরেন্দ্র দেবনাথ ৫৪ হাজার ১৬৮ ভোট। দলীয় অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী খলিলুর রহমান ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ১৮ হাজার ৭৫৪ ভোট।
বেসরকারি ফলাফলে নির্বাচিত গোলাম সরোয়ার টুকু বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তরুণ এই নেতা ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত। বরগুনা সরকারি কলেজছাত্র সংসদ নির্বাচনেও তিনি শম্ভু প্যানেলের বিপরীতে গিয়ে দুবার ভিপি নির্বাচিত হন। এরপর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। তিনি প্রথমবারের মতো কোনো নির্বাচনে অংশ নিয়েই বিজয়ী হয়েছেন।
আজ ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৯:২৭ | সোমবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি