জাতীয় ডেস্কঃ অতি মুনাফার লোভী এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ভোজ্যতেল মজুত করছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন-মিলার বা বড় বড় কোম্পানি, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা। আর মূল্যবৃদ্ধি করতে মিল পর্যায়ে পরিকল্পিত ভাবে গত সপ্তাহ থেকে ভোজ্যতেল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই সুয়োগ কাজে লাগিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করতে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বাজার থেকে তেল সরিয়ে ফেলেছেন। পরিস্থিতি এখন এমন যে বাজারে খোলা ও পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলেরও এখন হদিশ নাই। ১ লিটার বোতলজাত পাওয়া গেলেও বিক্রেতারা সরকারের বেঁধে দেওয়া দর মানছে না। বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকায়।
আজ রবিবার (৬ মার্চ) থেকে সরকারের ১৪টি সংস্থার তদারকি টিম পরিস্থিতি সামাল দিতে সাঁড়াশি অভিযানে মাঠে নামছে। সংস্থাগুলো তেলের সরবরাহ, মজুত, পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতে সংকটের কারণ খতিয়ে দেখবে। একই সঙ্গে কোম্পানিগুলো থেকে তেলের সরবরাহ কমার কারণ পর্যালোচনা করা হবে। পাশাপাশি আমদানি কত হয়েছে তা জানতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অভিযানকালে অনিয়ম পেলে জরিমানা, প্রতিষ্ঠান সিলগালাসহ অসাধুদের জেলে পাঠানোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এরইমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সারাদেশে সয়াবিন তেলের চাহিদা, আমদানি, সরবরাহ ও মজুদের তথ্য সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে। এটি তৈরি করতে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বিভিন্ন কোম্পানিগুলো থেকে তথ্য নিয়েছে। এতে কোন জেলায় কি পরিমাণে তেল সরবরাহ করা হয়েছে সে তথ্যও রয়েছে। এসব তথ্য জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর আলোকে সরকারি সংস্থাগুলো অভিযানে নামবে। এর মধ্যে-বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চারটি বিশেষ টিম গঠন করেছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গঠন করেছে আরো ৬টি বিশেষ টিম।
এছাড়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিমসহ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও আনসার বাহিনী মাঠে নামবে। এর বাইরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিম, বিএসটিআই, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিম, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ মোট ১৪ সংস্থা মাঠে থাকবে।
সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে-সয়াবিন তেলের বেআইনি মজুতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ কারণে এবারের অভিযানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ধারায় মামলার পাশাপাশি জরিমানা ও প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হবে। সয়াবিনের বেআইনি মজুত করার দায়ে নিয়োমিত বাজার তদারকিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, রবিবার থেকে কঠোরভাবে অভিযান শুরু হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিশেষ ৬টি টিমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চারটি বিশেষ তদারকি টিম কাজ করবে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র ও শিল্প মন্ত্রনালয়ের তদারকি টিম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিম, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় সিটি করপোরেশনের টিম অভিযান পরিচালনা করবে। তাদের সঙ্গে পুলিশ, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও আনসার বাহিনী কাজ করবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন মাঠে থাকবে। এর বাইরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করবেন।
তিনি আরো জানান, কে কোথায় তেল মজুত করেছে এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে আমাদের কাছে তথ্য চলে এসেছে। আমরা সেই তথ্য ধরে ধরে অভিযান পরিচালনা করব। এ অসাধুতার সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা পাব তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কঠোর শাস্তির আওতায় জরিমানাসহ প্রতিষ্ঠান সিলগালা ও অসাধুদের মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে সার্বিক তদারকিতে ভোক্তা অধিদপ্তর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও মিল সাময়িক সময়ের জন্য সিলগালা করা হয়েছে। এবার আর কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, সরবরাহ সংকটের কারণে গত বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম গড়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। দুপুরের দিকে প্রতি লিটার ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় পাওয়া যায়। ওইদিন সন্ধ্যায় ১৯০ থেকে ২০৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে গিয়ে একই চিত্র দেখা যায়। ওইদিন প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন কিনতে ক্রেতাকে ১৮০-২০০ টাকা পর্যন্ত ব্যায় করতে হয়েছে। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন তেল নেই। শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন নেই। বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৮০-২০০ টাকা।