বাংলাদেশে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ভূতুড়ে বিল পাঠিয়ে হয়রানি করার কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৯০ জনকে শাস্তির সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগের গঠিত টাস্কফোর্স। গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়ে বিদ্যুৎ সচিব সুলতান আহমেদ বিদ্যুতের বিল নিয়ে গ্রাহক ভোগান্তির কারণে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
বিদ্যুৎ সচিব জানান, এরইমধ্যে বেশ কয়েকজনের নিয়োগ বাতিল, চাকরি থেকে অব্যাহতিসহ আরো বিভিন্ন ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এই অনিয়মের বিষয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। গ্রাহকদের থেকে নেয়া অতিরিক্ত অর্থ জুন মাসের বিলের সাথে সমন্বয় করা হবে।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর একটি ফ্লাটবাড়ির মালিক তার হয়রানির কথা জানিয়ে রেডিও তেহরানকে বলেন, ভূতুড়ে বিল দেয়ার দায়ে প্রকৌশলী বা বিদ্যুৎ কোম্পানির কর্মচারিদের শাস্তি দেয়া হলেও তাদের ভৌতিক বিল সংশোধন করে ন্যায্য বিল দেয়া হবে কিনা সেটা স্পষ্ট নয়। তাছাড়া যেখানে করোনা পরিস্থিতিতে ভাড়াটে নেই, বিদ্যুতের ব্যবহার নেই সেখানে তারা নিয়ম মাফিক মিনিমাম চার্জের বেশি কেন দেবেন?
কনজুমার্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত করা এবং জন্য শাস্তি দেয়াতে ভোক্তা সাধারণ খুশি হবেন। একইসাথে তাদের হয়রানির সুরাহা করতে হবে; তাদের কাছ থেকে যথাযথ বিল আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য, করোনাকালীন সাধারণ ছুটির সময়ে মার্চ ও এপ্রিল মাসের অনুমাননির্ভর বিল তৈরিতে জড়িতদের চিহ্নিত করতে ২৫ জুন টাস্কফোর্স গঠন করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়। এছাড়াও ছ’টি বিতরণ কোম্পানিকে নিজস্ব তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করতে সাতদিনের সময় বেঁধে দেয় সরকার।
তবে, ভূতুড়ে বিল কাণ্ডে সরকারের সিদ্ধান্ত নেবার আগেই বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ঢাকার একাংশের বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসিতে ৪ প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এছাড়া, কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে স্থানীয় কার্যালয়ের ৩৬ নির্বাহী প্রকৌশলীকে। ওদিকে ডেসকো এবং উত্তরবঙ্গের নেসকোর কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ দাবি করছে, সারা দেশে ৬২ হাজার ৯৬ গ্রাহকের অতিরিক্ত বিল এসেছে। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ২ কোটি ৯০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৩৪ হাজার ৬১১ জন, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৯ লাখ ২৬ হাজার ৬৮৯ জন গ্রাহকের মধ্যে ১৫ হাজার ২৬৬ জন, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ১০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৫ হাজার ৬৫৭ জন, নর্দার্ন ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ১৫ লাখ ৪৮ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ২ হাজার ৫২৪ জন, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ১২ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ৫৫৬ জন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ৩২ লাখ ১৮ হাজার ৫১৫ জনের মধ্যে ২ হাজার ৫৮২ জন এ রকম অতিরিক্ত বিল পেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পাওয়ার সেলের মহাব্যবস্থাপক (ডিজি) মোহাম্মদ হোসাইন ছাড়াও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।