আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির জ্যেষ্ঠ দুই নেতার বিতর্কিত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে মন্তব্যের জেরে ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলোতে সাইবার হামলা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত সাইবার হামলার শিকার হয়েছে দেশটির ৭০টি ওয়েবসাইট। হামলার শিকার এসব ওয়েবসাইটের মধ্যে ভারতের সরকারি ও বেসরকারি ওয়েবসাইটও রয়েছে।
আজ সোমবার (১৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সরকারি ও বেসরকারি ওয়েবসাইটগুলোতে হামলার ঘটনার পেছনে রয়েছে হ্যাকার গ্রুপ ড্রাগনফোর্স মালয়েশিয়া। তাদের চালানো সিরিজ এসব হামলায় অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মধ্যে ইসরায়েলে ভারতীয় দূতাবাসের ওয়েবসাইট, ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এগ্রিকালচার এক্সটেনশন ম্যানেজমেন্টের ওবেসাইট এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচার রিসার্চের ই-পোর্টালও রয়েছে।
ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সব মিলিয়ে হ্যাকার গ্রুপ ড্রাগনফোর্স মালয়েশিয়া প্রায় ৭০টি ভারতীয় ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে। এমনকি দিল্লি পাবলিক স্কুল, বিভিন্ন ভবন এবং সারা দেশে কলেজের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যান্য গ্রুপগুলোকেও রেহাই দেয়নি হ্যাকার এই গ্রুপটি। এছাড়া শুধু মহারাষ্ট্রেই ৫০টিরও বেশি ওয়েবসাইট বিকৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এদিকে ওয়েবসাইট হ্যাকের পাশাপাশি অডিও ক্লিপ ও বার্তার মাধ্যমে মালয়েশীয় এই হ্যাকার গ্রুপটি একটি সাধারণ বার্তা পাঠিয়েছে। আর তাতে বলা হয়েছে- আপনার জন্য আপনার ধর্ম এবং আমার জন্য আমার ধর্ম। একইসঙ্গে সকল মুসলিম হ্যাকার, বিশ্বের সকল হ্যাকার, মানবাধিকার সংস্থা এবং কর্মীদের ভারতের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন শুরু করারও আহ্বান জানিয়েছে তারা।
এছাড়া হ্যাকড হওয়ার পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ রোববারের মধ্যে ইসরায়েলে ভারতীয় দূতাবাসের ওয়েবসাইট পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হলেও সোমবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচার রিসার্চের (আইসিএআর)-এর ওয়েবসাইটটি বিকৃত অবস্থায় ছিল। ভারতীয় সরকারি বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং সেইসাথে বেসরকারি পোর্টালগুলো গত ৮ থেকে ১২ জুনের মধ্যে হ্যাক করা হয়েছে বলে টাইমস অব ইন্ডিয়া নিশ্চিত করেছে।
অন্যদিকে, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ইঙ্গিত দিয়েছেন হ্যাকার গ্রুপ ড্রাগনফোর্স মালয়েশিয়ার হ্যাকাররা ভারতের প্রধান একটি ব্যাংক হ্যাক করার চেষ্টা করেছিল। হ্যাকটিভিস্ট এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ১৩ হাজারের বেশি বলেও জানানো হয়েছে।
ভারতের একজন শীর্ষ সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘এরা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হ্যাকার এবং রাষ্ট্রীয় মদতপ্রাপ্ত অপরাধী। ডিফেসমেন্ট অ্যাটাক বা ওয়েবসাইট বিকৃত করার হামলা হলো ভবিষ্যতে ব্যাংকিং ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে র্যানসমওয়্যার আক্রমণ ও ডেটা চুরির উন্নত ও শক্তিশালী ক্রমাগত হুমকির মতো বিষয়।’
তিনি আরও জানান, ‘ইসরায়েলি সাইটগুলো আক্রমণ করার মাধ্যমে তারা ইসরায়েলি কোম্পানির ব্যক্তিগত তথ্য, পাসপোর্ট তথ্য এবং গোপনীয় ভিপিএন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে। আর তাই আমাদের আরও সাইবার আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত।’
উল্লেখ্য, ভারতের রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাবেক মুখপাত্র নুপুর শর্মা এক টেলিভিশন শোতে অংশ নিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত ওই মন্তব্য করেছিলেন। পরে দলটির নয়াদিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান নবীন জিন্দালও নুপুর শর্মার মন্তব্যের সমর্থনে টুইট করেন। তাদের এই মন্তব্য দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এমনকি অভিযুক্তদের মন্তব্যের জেরে ভারতের কয়েকটি রাজ্যের মুসলিমরা বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন। আর এর রেশ ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাইরের বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য এরপরই অনেকটা নড়েচড়ে বসে বিজেপি। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিজেপি গত রোববার অভিযুক্ত নুপুর শর্মাকে বরখাস্ত এবং জিন্দালকে বহিষ্কার করা করে। এমনকি পরে বিজেপির এই দুই নেতা প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন।
সুত্রঃ এনডিটিভি, হিন্দু টাইমস।