চৌগাছা (যশোর): যশোরের চৌগাছার প্রায় প্রতিটি গ্রামে ভাইরাস জনিত রোগে শত শত গরু আক্রান্ত হচ্ছে। কৃষক ও গরুপালনকারীদের অনেকেই রোগটিকে গুটি বসন্ত ও অজানা রোগ বলে অভিহিত করছেন। তবে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস বলছে এটি গুটি বসন্ত বা অজানা কোন রোগ নয়। এই রোগটি ভাইরাস জনিত। রোটির নাম লামপাই স্কিন ডিজিজ। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে গরুর মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষক ও গরুপালনকারীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আতংকিত না হয়ে আক্রান্ত গরুকে স্বাভাবিক চিকিৎসা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা।
সরেজমিন উপজেলার দক্ষিণ কয়ারপাড়া, লশকারপুর, রোস্তমপরু, ইছাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কোননা কোন গরু লামপাই স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছে। গরুর বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গেলে কৃষকদের বিমর্ষ ও চিন্তিত দেখা গেছে।
কৃষকরা জানান, বিগত এক মাস ধরে শতশত গরু এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমানে ভয়াবহ মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে এ রোগ। দক্ষিণকয়ারপাড়া গ্রামে ১’শ ৮০ টি কৃষক পরিবারের মধ্যে কমপক্ষে ১’শ ২০ টি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
গ্রামের কবিরুল ইসলাম জানান, প্রথম দিকে আক্রান্ত গরুর শরীরের বিভিন্ন স্থান ফুলে উঠছে। এরপর ওই ফুলা স্থানের মাংস পচে যাচ্ছে এবং সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া আক্রান্ত গরুর পা ফুলে উঠছে। এ সময় গরু উঠে দাড়াতে পর্যন্ত পারছে না।
কৃষক রমজান আলী, ওমর আলী, আব্দুর রশিদ, আব্দুল হালিম জানান, দুই সপ্তাহ আগে হঠাৎ করেই তাদের গরুর গায়ে ছোট ছোট ফোলা দেখতে পান। প্রথম দিকে বিষয়টি তারা গুরুত্ব দেননি। এর দুই এক দিন পর দেখতে পান ওই ফুলা স্থান থেকে মাংস পড়ে গেছে এবং সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় তারা স্থানীয় পশু চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ানোর পর বর্তমানে আক্রান্ত গরু কিছুটা সুস্থ্য হয়ে উঠছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এ গ্রামের হজরত আলী, আনিছুর রহমান, আতিয়ার রহমান, আক্তার হোসেন, কালু বিশ্বাস, মিজানুর রহমান, মোঃ ইসলাম, শওকত আলী, সাহাজ্জেল হোসেন, জহুরুল ইসলাম, মন্টু মিয়া, মনিরুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, লিটন, সামাদ, নুরুসহ অধিকাংশ কৃষকের গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কৃষক রমজান আলী জানান, তার ৯টি গরু আছে। তারমধ্যে ৫টি আক্রান্ত হয়। আক্রান্তের মধ্যে ১ লাখ মূল্যের একটি গাভী মারা গেছে। তিনি বলেন, ওই গাভীর একটি বাচ্চা আছে। সেই বাচ্চাটিও আক্রান্ত।
বর্তমানে অন্য একটি মা গরুর দুধ খেয়ে জীবন বাঁচানোর লড়াইয়ে এখনো কোনরকম বেঁচে আছে। এছাড়া রেজাউল ইসলাম গত সপ্তাহে একটি এড়ে গরু বাজার থেকে ক্রয় করেন। যার মূল্য ছিল ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু ওই গরুটি ভাইরাস জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত শনিবার মারা গেছে।
গ্রামের শওকত আলী বলেন, যে রোগে গরু আক্রান্ত হচ্ছে আমরা স্থানীয় ভাবে ওই রোগকে গুটি বসন্ত রোগ বলে মনে করছি। স্বাভাবিক চিকিৎসা দেয়ার পর ধীরেধীরে অনেক গরু সুস্থ্য হয়ে উঠছে।
এদিকে উপজেলার জগন্নাথপুর, পুড়াপাড়া, জাহাঙ্গীরপুর, গরীবপুর, কাবিলপুর, বকশিপুর, মাধবপুর, বেড়গোবিন্দপুরসহ অধিকাংশ গ্রামে অজ্ঞাত রোগে গরু আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই রোগের ফলে কৃষক ও গরুপালনকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতংক।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা প্রভাষ চন্দ্র গোস্বামী বলেন, রোগটি নিয়ে ভয়ের কোন কারন নেই। রোগটিকে লামপাই স্কিন ডিজিজ বলা হয়। এই রোগ হলে গরুর শরীর ফুলে যেতে পারে। এমনকি ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। রোগটি হলে গরুর তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সেজন্য প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। আর আক্রান্ত পশুকে ভালো পশু থেকে নিরাপদ দুরত্বে রাখতে হবে। গোয়াল বা খামারের চারিপাশে ব্লিসিং পাউডার ছিটাতে হবে। তিনি বলেন, সাধারণত ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ভাইরাসটি চলে যায়। তাই আতংকিত হবার কোন কারন নেই।