‘আসছে ফাগুন দ্বিগুণ নয়, ১৬ কোটি হবো।’ এটি ছিল চট্টগ্রামের বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কাউসার মাহমুদের (২২) শেষ স্ট্যাটাস। তার দুদিন পর ৪ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট চত্বরে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। দীর্ঘদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে রবিবার (১৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
কাউসার লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের আব্দুল মোতালেবের ছেলে। আব্দুল মোতালেব নগরের চট্টগ্রাম কর্মাস কলেজ রোডে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে থাকেন।
কাউসার মাহমুদের বাবা আব্দুল মোতালেব বলেন, সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কাউসারের জানাজা হবে। সেখান থেকে মরদেহ চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে সোমবার রাতে আব্দুর রহমান মাতব্বর জামে মসজিদে একটি জানাজা হবে। জানাজা শেষে মসজিদের পাশে কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
এদিকে কাউসারের মৃত্যুর খবরে কাঁদছে বন্ধু-স্বজনরাসহ সবাই। গত ৯ আগস্ট ছিল কাউসারের ২২তম জন্মদিন। সেদিন ফেসবুকে জন্মদিনের কেক ও চিকিৎসাধীন কাউসারের ছবি পোস্ট করে কাউসারের ছোট ভাই সুলতাল মাহমুদ লিখেন, হেপি বার্থ ডে ভাইয়া। আজ দুই মাস ১০ দিন হয়ে গেলো ভালো করে কথা বলতে পারি না। তোর সঙ্গে একদিন ঝগড়া না করলে ভালো নাগে না। কিন্তু আজ কতদিন তোর সঙ্গে কথাই বলতে পারি না।
শহীদ কাউসারের বন্ধু তানজিম উদ্দিন লিখেন, আমাদের ৪১ ব্যাচের কাউসার মাহমুদ আল্লাহর জিম্মায় ফিরে গেলো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা আমার বন্ধুকে জান্নাত নসীব করুক। ২ বছরের ভার্সিটি লাইফে তোর সঙ্গে ছোট ছোট অনেক মেমোরি, ট্যুর, ইফতার, এক্সারসন সব জায়গায় তুই ছিলি প্রাণবন্ত। মিস করবো তোকে।
যেভাবে আহত হন কাউসার
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রথম থেকে সক্রিয় ছিলেন কাউসার মাহমুদ। ৪ আগস্ট চট্টগ্রামের নিউমার্কেট চত্বরে ছাত্র-জনতা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের জন্য জমায়েত হন। ওইদিন পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করে এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়।
সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন কাউসার। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় নগরের আগ্রাবাদে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। চিকিৎসকরা জানান, মারধরে গুরুতর আহত কাউসারের দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে।
এরপর সেখান থেকে ২২ সেপ্টেম্বর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। আইসিইউতে থাকাকালীন তার শারীরিক অবস্থার পুনরায় অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি চট্টগ্রাম সেনানিবাসকে জানায়।
২৮ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল পেইজে এক পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী কাউসার মাহমুদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে এক দিন আগে তাকে চট্টগ্রাম সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।
পরে সেখান থেকে চট্টগ্রাম সিএমএইচের সহযোগিতায় ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আর্মি অ্যাভিয়েশনের হেলিকপ্টারে ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা সিএমএইচে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কাউসার।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম