মোঃলোকমান হোসেন,যশোর জেলা প্রতিনিধি:-যশোরের বেনাপোলে দেশের সর্ববৃহৎ চেকপোস্ট কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন।প্রতিদিন এই পথ দিয়ে বিপুল সংখ্যক যাত্রী ভারতে আসা-যাওয়া করেন।তবে এখনও এই চেকপোস্টে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি।নানা সমস্যায় জর্জরিত চেকপোস্টটি। ফলে যাত্রীদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়।যাত্রীদের অভিযোগ, সরকারকে নির্ধারিত ফি দিয়েও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। সর্ববৃহৎ স্থল বন্দরের এমন অব্যবস্থাপনায় তারা হতাশ।জানা গেছে,বেনাপোল দেশের সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর।ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা,ভ্রমণ ও কূটনৈতিক কাজে পাসপোর্টধারী যাত্রীরা এ পথেই বেশি যাতায়াত করেন। সরকারের হিসাব মতে প্রতিদিন ৫-৮ হাজার যাত্রী এই পথে ভারতে আসা-যাওয়া করেন। যাত্রী প্রতি সরকার ৫০০ টাকা ভ্রমণ কর আদায় করে। ফলে প্রতিবছর এখান থেকে সরকারের আয় হয় ১০০ কোটি টাকা।
এছাড়া যাত্রীদের যাতায়াত সুবিধার জন্য যাত্রী টার্মিনালেই বাসের টিকিট কাউন্টার, ক্যান্টিন, বিশ্রামাগার, হুইল চেয়ার, টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বাবদ আরও ৪৫ টাকা হারে কর আদায় করা হয়। কিন্তু গত তিন বছরে টয়লেট ছাড়া অন্য কোনো সেবা দিতে দেখা যায়নি। প্রতি বছর এ খাত থেকে সরকার রাজস্ব পায় প্রায় সাত কোটি টাকা।
সমস্যায় জর্জরিত বেনাপোল কাস্টমস-ইমিগ্রেশন
গত কয়েকদিনে বেনাপোল চেকপোস্ট, ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও যাত্রী টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, দিনের বেশির ভাগ সময় যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। পাঁচ শতাধিক যাত্রী লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও নেই বসার পর্যাপ্ত আসন। সেখানে মাত্র ১০০টি আসনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে যাত্রীদের রোদ,বৃষ্টিতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এদিকে,যাত্রী টার্মিনালে পরিবহনের সাইনবোর্ডের দেখা মিললেও কাউকে টিকিট বিক্রি করতে দেখা যায়নি। চোরাচালান প্রতিরোধে সেখানে স্ক্যানিং মেশিন থাকলে প্রায়ই সেটি অচল থাকে।আরও জানা গেছে, যাত্রীর ছদ্মবেশে এই চেকপোস্ট দিয়েই শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়া করছে।ইমিগ্রেশনের জনবল সংকটে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয়।অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী যাত্রীরা হুইল চেয়ার ও ট্রলি না পেয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা এক পাসপোর্ট যাত্রী বলেন,‘কাস্টমসে সাইনবোর্ডে লেখা আছে হুইল চেয়ার ব্যবহার করুন।কিন্তু কোথাও হুইল চেয়ার? ট্রলিও খুঁজে পেলাম না।এ শরীর নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে কষ্ট হয়।এমন অব্যবস্থাপনায় আমরা খুবই হতাশ। ’দুর্নীতি দমন কমিশনের(দুদক) কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান লিটু বলেন,‘আমি ভারতে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরছিলাম।সাথে তেমন কিছু ছিল না।তারপরও কাস্টমস সদস্যরা জানান টাকা না দিলে ব্যাগ ছাড়া হবে না।পরে পরিচয় দিয়ে রক্ষা পাই।’
বেনাপোল বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক)প্রদোষ কান্তি দাস বলেন, ‘বেনাপোল যাত্রী টার্মিনালে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। আপাতত ভবনে জায়গা সংকটে যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। পরিবহন কাউন্টারগুলোও একই কারণে এখানে বসতে পারছে না। টার্মিনালের পাশে আরও জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলছে। সেখানে যাত্রীদের সব ধরণের সেবা নিশ্চিত করা হবে।’বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা ইমদাদ হোসেন বলেন, ‘চেকপোস্টে যাত্রী সেবার মান আগের চেয়ে ভাল। দালালদের প্রবেশ রোধে নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। পাসপোর্ট যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতে একশ ট্রলির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে ট্রলিগুলো ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। তবে শিগগিরই এ সেবা চালু করা হবে।’বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মাসুদ বলেন,‘আমাদের যে জনবল আছে তাতে কাজের খুব একটা সমস্যা হয় না। তবে ইমিগ্রেশন ভবনে জায়গা সংকটের কারণে যাত্রীদের চাপ বাড়লে একটু সমস্যা হয়।’