জাতীয় ডেস্কঃ আজ মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বিশ্বের সবচেয়ে বায়ুদূষিত দেশের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। বায়ুদূষণ ও বায়ু পরিশোধন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা সুইজারল্যান্ডের সংস্থা আইকিউ এয়ারের প্রকাশিত রিপোর্টে দূষিতের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। খবর রয়টার্সের।
আইকিউ এয়ারের প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালে বিশ্বের ১১৭টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত ছিল বাংলাদেশ। আর বিশ্বের ৬ হাজার ৪৭৫টি শহরের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত শহর নয়াদিল্লি। শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। একটি দেশও ২০২১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রত্যাশিত বায়ুমানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপ করা শহরগুলোর মধ্যে ২০২১ সালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্ষম হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ শহর। বরং ৯৩টি শহরে পিএম-২ দশমিক ৫-এর মাত্রা প্রস্তাবিত স্তরের চেয়েও ১০ গুণ বেশি। মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বাতাসের মান বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ এবং সবচেয়ে দূষিত ৫০ শহরের মধ্যে ৪৬টিই এ অঞ্চলের।
আইকিউ এয়ারের এয়ার কোয়ালিটি সায়েন্স ম্যানেজার ক্রিস্টি শ্রোডার বলেন, অনেক দেশ আছে, যারা বায়ুদূষণ কমানোর ক্ষেত্রে বড় উদ্যোগ নিচ্ছে। চীনের অবস্থা অতীতে অনেক খারাপ ছিল। দেশটি দিন দিন উন্নতি করছে। ২০২১ সালে চীন পিএম ২ দশমিক ৫ র্যাংকিংয়ে ২২তম স্থানে নেমে এসেছে। এর আগের বছর দেশটির অবস্থান ছিল ১৪তম। তবে বিশ্বে এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে বায়ুদূষণ পরিস্থিতি ভয়াবহ।
গত বছর ডব্লিউএইচও তার বায়ুমান নির্দেশক গাইডলাইন পরিবর্তন করে। সেই সময় সংস্থাটি জানায়, পিএম ২ দশমিক ৫ নামে পরিচিত ছোট ও বিপজ্জনক বায়ুবাহিত কণার গড় বার্ষিক ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়।
এদিকে বাংলাদেশের নগরবাসীর কাছে যানজটের পাশাপাশি আরেক যন্ত্রণার নাম বায়ুদূষণ। মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কবলে নগরজীবন বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছে। বাড়িয়ে তুলছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে শিশু, বৃদ্ধ ও শ্বাসতন্ত্রের রোগীরা। দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়ে চললেও কর্তৃপক্ষ কার্যত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ রয়েছে পরিবেশবিদদের। ঢাকার উন্নয়ন প্রকল্পকে ঘিরে সকাল-বিকাল পানি ছিটানো হলেও আশানুরূপ ফল দৃশ্যমান নয়। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের পানি ছিটানোর কাজে সার্বক্ষণিক তদারক এবং বাতাসের মান স্বাভাবিক ও জীবনযাত্রায় স্বস্তি ফেরাতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। দূষণের মাত্রা যেভাবে বেড়েছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গাড়ির কালো ধোঁয়া কমানো ও অপরিকল্পিত নির্মাণকাজের লাগাম টেনে ধরা প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকে।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকার বায়ু দূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো- ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের তথ্যমতে- বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন এবং বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে।