মূল্যস্ফীতির যাতাকালে যখন পিষ্ট পুরো পৃথিবী তখনই স্বর্ণ কেনার ধুম লেগেছে। বেশ কয়েকটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেকর্ড পরিমাণ স্বর্ণ কিনছে রিজার্ভের জন্য। শুধুমাত্র বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০০ টন স্বর্ণ কেনা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে রাশিয়ার টানাপোড়েনের কারণে বিশ্বমন্দা সামাল দিতে এ পরিস্থিতি।
বিশ্বজুড়ে জেঁকে বসেছে আর্থিক মন্দা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফল ভোগ করছে সারা বিশ্ব। দামের উর্ধ্বগতি আর জ্বালানির সংকটে ত্রাহিরাহি অবস্থা ইউরোপ ও তার মিত্রদের শিবিরে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা উদ্যোগ থাকলেও অর্থনীতিতে সুফল খুব একটা নেই।
২০২৩ এর অর্থনীতি কোথায় দাঁড়াবে কিংবা কি হবে তার নানা হিসেব-নিকেশের মাঝে বিশ্বজুড়ে বেড়েই চলেছে স্বর্ণের বিক্রি। স্বর্ণের চাহিদা বেড়েছে বছর ব্যবধানে ২৮ শতাংশ। ২০২১ সালে যেখানে এই ধাতব মুদ্রা বিভিন্ন খাতে ব্যবহারের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৩ হাজার টন, ২০২২ এর তিন প্রান্তিকেই যা পৌনে ৪ হাজার টনে পৌচেছে। অলংকার, বার, কয়েনের বিক্রিও বেড়েছে। তবে জিরো কোভিডনীতির কারণে প্রযুক্তি খাতে চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য খর্ব হওয়ায় এ খাতে স্বর্ণ বিক্রিতে কিছুটা ভাটা রয়েছে।
প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্বর্ণের কেনাবেচায় বেশ বড় ধরণের কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। তৃতীয় প্রান্তিকে এসে আমরা বেশ কিছু অস্বস্তিকর পরিস্থিতি দেখতে পেয়েছি। চীনের কোভিড নীতির কারণে প্রযুক্তিখাতে স্বর্ণের ব্যবহার কমেছে। আর যুদ্ধের কারণে বেশ কয়েকটি দেশ স্বর্ণ কেনার পরিমাণ বাড়িয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে এর প্রভাব হয়তো আমরা দেখতে পারি। তবে, তা সুখকর কিছু বয়ে আনবে না।
অর্থের পরিস্থিতি বিবেচনায় ইউরোপের দেশগুলোর কোষাগারে হাহাকার। বিশেষ করে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার উল্টো ফল ভোগ করা ইইউভুক্ত দেশগুলো এখন খুব একটা ভালো নেই। অথচ বছরের শুরুতে বিশ্বের সবগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাত্র ১০০ টনের মতো স্বর্ণ কিনে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাজে যুদ্ধের দামামা। তাতে ২০০ টন স্বর্ণ কিনে প্রতিষ্ঠানগুলো। তৃতীয় প্রান্তিকে দুই প্রান্তিকের যোগফলেরও দ্বিগুন কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। আর তাতেই সর্বোচ্চ স্বর্ণ কেনার হিসেবে ভেঙ্গে যায় ৫৫ বছরের ইতিহাস।
ক্রেমলিনের এ আঘাত সইতে তুরস্ক থেকে তুর্কেমেনিস্তানে চলছে অর্থনৈতিক মারপ্যাচ। রাশিয়ার স্বর্ণ যেহেতু লন্ডন বুলিয়ান মার্কেটে নিষিদ্ধ, তার বিক্রি নিয়ে চলছে তাই নানা খেলা। ডলারের চাপে খোদ ওয়াশিংটন যেখানে বিদ্ধ, সেখানে নতুন খেলোয়াড় হিসেবে কতুটুক কাজ করবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণের খেলা নতুন বছরে অর্থনীতির দিগন্তে কি নতুন সূর্য্যের বার্তা দিবে সে প্রশ্ন রয়েই যায়।