পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মীত হবে ভাবনাটি ছিল স্বপ্নের মত। ভাবনাটি শুরু হয়েছিল আগেই কিন্তু, খড়স্রোতা পদ্মায় সেতু নির্মান বাংলাদেশের জন্য ছিল প্রায় অসম্ভব। প্রযুক্তি কিংবা আর্থিক সক্ষমতা কোনটাই বাংলাদেশের ছিলনা। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সহায়তায় সেই সেতু নির্মানের উদ্যোগ গ্রহন করে। অর্থও বরাদ্ধ নিশ্চিত হয় সেতু নির্মানের জন্য। কিন্তু কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই শুরু হয়ে যায় ষড়যন্ত্র। দেশী বিদেশী দালাল নিয়োগকরে দুর্নীতি আবিষ্কারের চেষ্টা চলে। দুর্নীতি হয়েছে বলে বরাদ্ধকৃত অর্থ ফেরত নিয়ে যায় বিশ্বব্যাংক। বন্ধ হয়ে যায় সেতু নির্মান। দূর্নীতির বিরুদ্ধে মামলা করা হয় কানাডার আদালতে। জাতী এবং দেশের জন্য বিষয়টি ছিল অপমানজনক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন এই অভিযোগের বিরুদ্ধে। ঘোষনা করেন ” নিজস্ব অর্থায়নে নির্মীত হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু”। সেই ঘোষনাই বাংলাদেশের অবস্থান বদলে দিয়েছে। দেশীয় অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মান শুরু হয়। সেতু এখন দৃশ্যত বাস্তবতা। পদ্মায় এখন সবক’টি পিলার দাড়িয়ে গেছে। স্প্যান বসানো বাকী রয়েছে আর মাত্র ১২ টি। এই ১২ টি স্প্যান বসানো হলেই সেতু নির্মান সম্পন্ন হয়ে যাবে। ২০২১ সালের জুন মাসে চালু হবে পৃথিবীর বৃহত্তম সেতুগুলির একটি পদ্মাসেতু। মামলাটিও মিথ্যা প্রমানীত হয়েছে কানাডার আদালতে। যারা দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেশের বৃহত্তম পদ্মা সেতু নির্মানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন তারা এখন কি বলবেন? বেগম জিয়া এই সেতু নিয়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তিনিইবা এখন কি বলিবেন জনগনকে? লিংক রোড ইতিমধ্যেই নির্মীত হয়ে গেছে। সাহায্য ছাড়া পদ্মা সেতু নির্মানের ঘোষনার পর থেকেই শেখ হাসিনা আর বাংলাদেশের প্রতি বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি বদলে দেয়। বিশ্ব ব্যাংক সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রস্তাব দেয় সাহায্যের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশকে ভিন্ন অবস্থানে দাড় করিয়ে দেন। গ্রামীন অর্থনীতি আর, কৃষিবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করে দেশের খাদ্যাভাব পুরন করে ফেলেন। বিদ্যুৎ,যোগাযোগ এবং উৎপাদন নিশ্চিত করেছেন রাজস্ব উৎপাদনে। নারীর ক্ষমতায়ন, গড় আয়ুবৃদ্ধি আর রপ্তানী উৎসাহিত করেছেন। উন্নয়নের সব সূচকেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম মডেল রাষ্ট্র। অবহেলিত গ্রামীন জনজীবন এখন স্বাবলম্বী। শহুরে মানূষের চেয়ে গ্রামের মানূষেরাই এখন বেশি সুখী । শেখ হাসিনা দেশের রাজনীতিকেও বদলে উন্নয়নের রাজনীতি প্রর্বতন করেছেন দেশে। সন্ত্রাস আর হরতালের রাজনীতির বদলে উন্নয়নের রাজনীতি উপহার দিয়ে দেশকে ভিন্ন অবস্থানে নিয়েগেছেন। সর্বোচ্চ রাজস্ব মওজুত ছাড়াও জিডিপি এখন ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। বেগম খালেদা জিয়া জনগনের কাছে প্রকাশ্য জনসভায় বলেছিলেন” পদ্মা সেতুতে উঠবেনা, ভেঙ্গে পড়বে”। এখন তিনি কি বলবেন ? ১১ বছরের আওয়ামী লীগের শাসনামলে বি এন পি কোনই সাফল্য দেখেনি। একটি দরিদ্র দেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নত করার যোগ্যতাও বি এন পি অগ্রাহ্য করেছে। যারা একসময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যায়িত করেছে তারাই, এখন বাংলাদেশকে মডেল রাষ্ট্র বলে সার্টিফিকেট দেয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে প্রতিদিন। আজও দেখলাম বি এন পি নেতারা বক্তব্য দিয়েছে ” সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থ্যা ভেঙ্গে পড়েছে। সরকারের ব্যর্থতার কারনেই মানূষ মারা যাচ্ছে”। বি এন পি নেতাদের এমন বক্তব্য শুনে ভয় হয়। এই নেতারা দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়? রাজনীতি কি শুধুই ক্ষমতা? দেশের মানূষের প্রতি কি কোনই দায়বদ্ধতা নেই তাদের? অসত্য বলে জনগনকে ক্ষেপিয়ে তোলাই যদি রাজনীতি হয় তাহলে, এমন রাজনীতি বাংলাদেশে দরকার নেই। এই নেতারা এখন করোনা নিয়েও রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। নাই নাই বলে যেভাবে অভিযোগ করছেন, তারা ক্ষমতায় থাকলে কি করতেন! তাদের দৃষ্টিতে ভুল হলে তাদের সুচিন্তিত মতামতটাই নাহয় প্রকাশ করুক, সরকার না মানলেই জনগন জানবে সরকারের ব্যর্থতাটি আর তাদের যোগ্যতাটি। চুরির কথা বললে তাদের সরকারের আমলনামাটিও বলতে হবে। শীর্ষ নেতারাই দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন আদালতের রায়ে। জেল খাটছেন দন্ডিত হয়ে। খাম্বা কিংবা হাওয়া ভবন এখনো স্মৃতির পাতা থেকে মুছে যায়নি। কোভিড-১৯ বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। এই বিপর্যয় কোন একক দেশের নয় বিশ্ব মানবতার চ্যালেঞ্জ। পৃথিবীর সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হবে। বি এন পি নেতা রিজভি সাহেবের লিখিত বক্তব্য শুনে এখন বিরক্তি লাগে। বি এন পি কে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল দাবী করাটাও হাস্যকর। যারাই এখন সরকারের সমালোচনা করে উত্তেজীত হচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলি, রাজনীতিতে সময় একটা বড় ফ্যাক্টর। অসময়ের রাজনীতি সুফল বয়ে আনেনা।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
২৭ মে ২০২০।