কলমে- শ্যামা
লোহার খাঁচায় বন্দী করে তারা বারবিকিউ করে জুস দিয়ে খেলো আমাকে,
তারা উঠেপড়ে লেগেছিলো কচি মাংস পুড়িয়ে খেতে।
পেটের দায়ে শিশু বয়সেই যেমনিভাবে জুস ফ্যাক্টরিতে কাজ নিতে উঠেপড়ে লেগেছিলাম।
যখন আমি আগুনে পুড়ে ঝলসে যাচ্ছি তারা তখন গেটে বড়োবড়ো তালা দিলো, বুনো উল্লাসে ফেটে পড়লো- আমার শরীরের মাংস দিয়ে বারবিকিউ পার্টি করবে বলে।
বাঁচার ইচ্ছায় জুতোয় নিজের নাম লিখে আমি ছুঁড়েছিলান জানালা দিয়ে,
জানাতে চেয়েছিলাম আমি শ্রমিক,
তালাবদ্ধ দরোজার ওপারে বেঁচে থাকার আর্তচিৎকারে এক অসহায় মানুষ।
এই জুতোজোড়া স্বাক্ষী-
আগুনে দগ্ধ আমার শরীর বিধ্বস্ত ভবনের কনক্রিটের নিচে চাপা দিয়েছো,
অথচ আমার মতো শ্রমিকের ঘামে, রক্তে আর বুকের চাপা কষ্টের ওপর দাঁড়ায়,
দেশীয় জিডিপির প্রবৃদ্ধি আর উন্নয়ন।
তোমরা নাকি আজ, বর্তমান বিশ্বের দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতি সপ্তম দেশ।
যারা আমার শরীরের পোড়া মাংস,
সেজান জুস দিয়ে চিবিয়ে খেলে,
সেই সেজান জুস তৈরি করিয়েছো আমারই হাতে, পঁচা আমে।
করোনা বেলাতেও পায়নি বেতন হাসেম ফুডের শ্রমিক যারা,
প্রতিবাদে রূপগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেছিলাম আমরা৷
পাওনা চার মাসের বেতন আর ওভারটাইম নাই,
আমি পুড়ে ভস্মীভূত হওয়ার মাত্র সপ্তাহখানেক আগে।
তাই কি আজ আমাকে পুড়িয়ে বারবিকিউ পার্টি করলে?
চেয়ারম্যান হাসেম স্যার তুমি বড় ভাগ্যবান,
শ্রমিকদের এই বাহান্নজন আর কোনদিন বকেয়া বেতন চেয়ে আন্দোলন করবে না।
গরীবের হক মেরে খেয়ে নন-ক্যাম্পেইন ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে বাধ্য করা,
হাসেম সাহেবেরাই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, তাই তোমাদের হাত কাঁপে না, নির্বিকার থাকতে পারো অকুতোভয়ে।
ঠাণ্ডা মাথায় আমাদের বাহান্নজন মানুষকে গলিত লাশে পরিণত করলে।
গরীবের রক্ত চুষে আর জীবনের বিনিময়ে হাসেম তুমি পকেট ভরো,
উন্নয়নের রোল মডেল তৈরি করো, বাড়াও জিডিপি প্রবৃদ্ধি।
বিজনেস ম্যানের পোষা রাষ্ট্র, সরকার, পুলিশ প্রশাসন আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি,
উল্টো আমাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার বিচার চেয়ে যারা মানববন্ধন করলো, তাদের নির্লজ্জভাবে পিটিয়ে গেলে অবিরাম,
আর পত্রিকার পাতায় ক’জনইবা প্রচার করলো সেজান ব্রান্ডের জুসের নাম,
সখ্যতা নষ্ট হয়ে যাবে, তাই তো।
কোথায় দেবো বিচার?
কার কাছে দেবো?
আসমানের মালিকের কাছে, হেহ- বিচার দেবো?
কেন দেবো তার কাছে বিচার, বলতে পারো?
এই রাষ্ট্র, সরকার, পুলিশ আর মালিকেরা,
যারা আমাদের শাসনের বদলে শোষণ করে, তারা কারা?
কে তাদের সেই ক্ষমতা দিলো,
কে তাদের মালিক বানালো,
কে আমাদের স্বপ্ন পুড়িয়ে দিতে দিলো,
কে পরিবার, সমাজ, নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে-
বারবিকিউ পার্টির উপকরণ করতে দিলো,
তিনি তো সেই সত্ত্বা, মহাপরাক্রমশালী, পৃথিবীর একমাত্র অধিকর্তা, সকল ক্ষমতা উৎস।
আসমান-জমিনের মালিক খোদা।
তাই যদি হয় তবে, ঐ আসমানের মালিকই আমাকে পুড়িয়ে মারার ক্ষমতা দিয়েছে, তাদের।
তাই আসমানের মালিকের কাছে কোন বিচারই দেবো না।
চাই না বিচার, নাহ বিচার বলে কিছু নাই!
আসমানের মালিক, দুনিয়ায় মালিকের পক্ষেই থাক।
একবার বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের কথা মনে পড়েছিলো,
কারণ আমাদের বায়ান্নজনকে লোহার খাঁচায় বন্দী করে আগুনে ঝলসে বারবিকিউ বানানো হচ্ছে।
আহা! সেই বায়ান্নর সাথে আজকের বায়ান্নর কতো অমিল!
তোমার আসমানে বিচার নামের শব্দ নাই!