যুক্তরাষ্ট্রে যতই ঘনিয়ে আসছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ততই দেশটি রাজনৈতিক সহিংসতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যা গত কয়েক দশকে নজিরবিহীন। সর্বশেষ সহিংসতার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের পোর্টল্যান্ড শহরে ট্রাম্প সমর্থকদের সঙ্গে বর্ণবাদ বিরোধীদের সংঘর্ষের সময় গুলিতে একজন নিহত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকরা ৬০০ গাড়ির একটি বহর নিয়ে শহরে ঢোকে তার পরপরই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। পক্ষ ও বিপক্ষের মধ্যে এ সহিংস ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় জানান, প্রয়োজনে কঠোর হাতে রাজনৈতিক সহিংসতা মোকাবেলা করা হবে। আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ আন্দোলন দমনের জন্য সব রকম পন্থা ব্যবহার করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
অন্যদিকে, গত কয়েক মাস আগে মার্কিন শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি নির্মমভাবে নিহত হওয়ার ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর সহিংসতা শুরু হয় এবং এই সহিংসতা এখনো চলছে। সরকারের অন্যায় নীতি ও বৈষম্যের প্রতিবাদে জনগণের বিক্ষোভ প্রথমদিকে শান্তিপূর্ণ হলেও সেই বিক্ষোভ দমনের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী সহিংসতার আশ্রয় নিলে প্রতিবাদ আরো জোরদার হয় এবং সহিংসতায় রূপ নেয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এ সহিংসতায় এ পর্যন্ত অনেক বিক্ষোভকারী হতাহত হয়েছে, অনেকে আটক হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষের সময় বহু দোকানপাট ও ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে এবং বিক্ষুব্ধ জনতা দাস ব্যবসায়ীদের মূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
আমেরিকায় বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ আন্দোলন চলার একই সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ও ঘনিয়ে আসায় সহিংসতার মাত্রা বহুগুণে বেড়েছে। একদিকে ট্রাম্পের বিরোধীরা মহাসড়কগুলোতে উপস্থিত হয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং আসন্ন নির্বাচনে ফের ট্রাম্পের বিজয় ঠেকানোর চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য তার জনসমর্থনের বিষয়টি প্রমাণের লক্ষ্যে নিজ সমর্থকদেরকে রাস্তায় নামিয়েছে। ফলে দু’পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ডেমোক্রেটিক দলের সিনেটর ক্রিস মারফি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন সহিংসতা ও ত্রাস সৃষ্টি করতে পারলেই তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবেন। ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জো বাইডেন বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস আচরণের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন ট্রাম্প সহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছেন।
এ অবস্থায় আগামী দু’মাসের মধ্যে আমেরিকার বিভিন্ন শহরে সরকারবিরোধী আন্দোলন ও রাজনৈতিক সহিংসতা কমবে বলে মনে হয় না। ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দলের নেতারা তাদের সমর্থকদেরকে এটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন।
রিপাবলিকান দলের নেতারা অভিযোগ করেছেন ডেমোক্রেটরা কমিউনিজম প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং তারা বর্ণবাদী ও সহিংসতাকামী। তারা আমেরিকাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চায়। অন্যদিকে ডেমোক্রেটরাও রিপাবলিকানদেরকে ফ্যাসিস্ট ও স্বেচ্ছাচারী হিসেবে অভিহিত করেছে যারা কিনা আমেরিকার জনগণের ব্যক্তি ও সামাজিক স্বাধীনতাকে হরণ করতে চায়।
পর্যবেক্ষকরা, আমেরিকার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উনবিংশ শতাব্দির গৃহযুদ্ধ অবসানের পর সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ সঙ্কট বলে মনে করছেন। তবে আমেরিকায় এখনো এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে হামলা চালাবে বরং বিষয়টি নির্ভর করছে রাজনৈতিক নেতাদের দূরদর্শিতার উপর। এ কারণে আমেরিকার ভবিষ্যতের ব্যাপারে দেশটির জনগণ খুবই চিন্তিত। সুত্রঃ পার্সটুডে।