মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় বাবার লাশ বাড়িতে রেখে বিসিএস পরীক্ষায় বসলেন মেয়ে। এ ঘটনায় জেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
গত মঙ্গলবার বিকেলে কিডনীজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মোঃ তাহির আলী (৬৫) মারা গেছেন। বাবাকে হারিয়ে অনেকটা নির্বাক হয়ে যায় মেয়ে রেবা বেগম। রেবা বেগম সিলেট মদন মোহন কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স শেষ করে এবারের বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
বুধবার সকাল ১০টায় তাঁর বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। এমন অবস্থায় মনকে পাথরে চাপা দিয়ে বাবার লাশ বাড়িতে রেখেই পরীক্ষার হলে বসতে হলো রেবা বেগমকে। সে ৪৪ তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরে আর বাবাকে সে দেখতে পায়নি। এরমধ্যেই জানাজা শেষে বাবার লাশ দাফন হয়ে গেছে।
রেবা বেগমের বিসিএস পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ। বুধবার সকাল ১০টার আগে চোখ মুছতে মুছতে ওই কেন্দ্রে যায় সে। সহপাঠী ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সহযোগিতায় ৪৪ তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয় সে।
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
রেবার পরিবার ও স্থানীয় লোকজনদের বরাত দিয়ে জানা যায, কুলাউড়ার উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের উত্তর চাতলগাঁও গ্রামের বাসিন্দা, সাবেক ইউপি সদস্য ও রবিরবাজারের বিশিষ্ট ফার্ণিচার ব্যবসায়ী মোঃ তাহির আলী। মঙ্গলবার বিকেলে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মেয়ে রেবা বেগম বুধবার ৪৪ তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। হঠাৎ করে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাহির আলীর মৃত্যু হয়। বাড়ি জুড়ে শোকের আবহাওয়া, চলছে লাশ দাফনের প্রস্তুতি। বাবার মৃত্যুর পর রেবা ভেঙে পড়লেও স্বজনদের কথায় বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যায় সে।
এর আগে বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় মনসুর শাহী ঈদগাহ মাঠে বাবা তাহির আলীর জানাজা হয়। জানাজায় তাহির আলীর আত্মীয়স্বজন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গ্ৰামবাসী ,পাড়া প্রতিবেশী ও আশপাশের এলাকার প্রায় সহস্রাধিক মানুষের অংশগ্রহণে জানাযা হয়। পরে মনুসর শাহী ঈদগাহ প্রাঙ্গণের কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তাহির আলী ৫ কন্যা, ৫ ছেলে ও দুই স্ত্রী রেখে গেছেন।
বিকেলের দিকে পরীক্ষা শেষে রেবা বেগম বলল, ‘বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসতেন। বাবা চাইতেন আমি যেন পড়ালেখা করে অনেক বড় হই। তাই এমন অবস্থায়ও আমি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। বাবার আত্মাকে আমি কষ্ট দিতে চাই না।’ আপনারা সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। আর আমি যদি বিসিএস পাশ করি তাহলে আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ হবে।
ডিবিএন/ডিআর/মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান