ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বাংলাদেশের অভিনেতা ফেরদৌস ও গাজী আব্দুন নূরের তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে প্রচারণায় অংশ নেওয়া নিয়ে মুখ খুলেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
শনিবার পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরে বুনিয়াদপুরের সভায় বক্তৃতাকালে মোদি বলেন, অন্য দেশ থেকে লোক এনে আজ পশ্চিমবঙ্গে ভোটের প্রচার করানো হচ্ছে। এমন তোষণের রাজনীতি ভারতের আর কোথাও দেখেছেন? বাংলাদেশের অভিনেতা ফেরদৌস ও গাজী নূরকে দিয়ে ভারতের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের প্রচারণা চালিয়েছেন। এর ফলাফল ভালো হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে এসে তৃণমূল প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ২৩ মে লোকসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর টের পাবেন তৃণমূলনেত্রী। প্রথম দুই দফা ভোটের পরই মমতার ঘুম হারাম হয়েছে বলে দাবি করেন মোদি।
মোদি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোটেই দিদির ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেছিলো। আর দ্বিতীয় দফার যে রিপোর্ট আসছে তাতে তো দিদির ঘুম ছুটেছে। মিডিয়াতে দেখেছি, এ রাজ্যের ভাই-বোনেরা যেভাবে ভোটের সময় তৃণমূলের গুন্ডাদের শিক্ষা দিয়েছেন ওইভাবেই প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রাজ্যের পুরুলিয়া জেলায় আমাদের এক কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি বিজেপি সমর্থকদের আশ্বাস দিচ্ছি, এই সমস্ত অত্যাচারের পুরো বিচার হবে। হিংসা যারা করছে, তাদের আইন অনুযায়ী কড়া শাস্তি দেওয়া হবে। মমতা দিদি, পশ্চিমবঙ্গে যা করছেন, তাতে ওঁকে ভবিষ্যৎ মাফ করবে না। মা মাটি মানুষের নাম করে ধোঁকা দিয়েছেন মমতা।
মোদি বলেন, একটা সময় ওঁকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) দেখে আমিও ভুল করেছিলাম। টিভিতে ওঁকে যখন দেখতাম, তখন মনে হতো, উনি গরিব মানুষদের জন্য লড়াই করছেন। আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই ভুল ভেঙেছে। গরিবের টাকা লুট হয়েছে। নারদা, সারদা, রোজভ্যালি লুটে নিয়েছে। আমি পুরো টাকার হিসাব নেব। চিটফান্ড দুর্নীতির প্রতিটি টাকার হিসাব দিতে হবে দিদিকে। পিসি-ভাইপো (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) মিলে যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতি করেছেন তার জবাব দিতে হবে।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পরীক্ষায় যারা পাস করেছেন, তাদের চাকরি দেন না। অথচ গুণ্ডাদের দেওয়ার টাকা আছে। চাকরিজীবীদের ডিএ দেওয়ার টাকা নেই। অথচ পশ্চিমবঙ্গের মডেল সারা দেশে লাগু করার স্বপ্ন দেখে চলেছেন দিদি। অন্য দেশ থেকে লোক এনে এই রাজ্যে প্রচার চালানো হচ্ছে। আসলে তোষণের রাজনীতি করার জন্য এসব করা হচ্ছে। দেশের কোথাও এই জিনিস দেখেছেন?
মোদি এদিন সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন, আপনারা মনে করে দেখুন, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ী তদন্ত কে রুখতে চেয়েছিলেন? ভারত এখন জঙ্গিদের ঘরে ঢুকে মারছে। এটাই করা উচিত কি না আপনারাই বলুন? অথচ মমতা দিদি প্রমাণ চাইছেন। সেনার ওপর ভরসা নেই তাঁর।
মমতাকে উদ্দেশ করে মোদি আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়ে বলেন, প্রমাণ যদি চান তো আপনার রাজ্যে চিটফান্ড দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করুন। আর তা না পারলে দিদিকে গরিবের চোখের পানির হিসাব দিতে হবে।
মোদি বলেন, আমরা ক্ষমতায় এলে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তবে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে।
অন্যদিকে এর আগে পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট আসনের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মোদির নামে জ্যাকেট আর সিনেমা আগেই তৈরি করা হয়েছে। তাঁর নামে এখন শুধু জুতা বানানোই বাকি। এছাড়া মোদিকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে মমতা বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে ৪২-আসনের ৪২টিই পাবে তৃণমূল, গো-হারা হারবে বিজেপি।
সূত্র : এন টি ভি