যা ছিল স্বপ্ন, তা এখন বাস্তব। মুঠোফোন তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশেই। শুধু কথা বলার জন্য ফিচার ফোন নয়, উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার উপযোগী স্মার্টফোনও তৈরি হচ্ছে এ দেশের কারখানায়। মুঠোফোন কেনার সময় আপনি যদি একটু খেয়াল করে মোড়কটি দেখেন, তাহলে দেখবেন লেখা আছে ‘বাংলাদেশে তৈরি’ অথবা ‘বাংলাদেশে সংযোজিত’।
এর মানে হলো, কেউ দেশেই মুঠোফোন তৈরি করে। আবার কেউ কেউ তৈরির পথে প্রথম ধাপ, অর্থাৎ সংযোজনে রয়েছে। যেমন দেশি ব্র্যান্ড ওয়ালটনের মুঠোফোন বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। তেমনি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের ব্র্যান্ড স্যামসাংয়ের মুঠোফোন বাংলাদেশে সংযোজিত হচ্ছে। আরেক দেশি ব্র্যান্ড সিম্ফনি, দ্রুত অগ্রসরমাণ চীনা ব্র্যান্ড অপো, ভিভো, টেকনো ও ভারতীয় ব্র্যান্ড লাভা বাংলাদেশে কারখানা করেছে। কারখানা রয়েছে ফাইভস্টার ও উইনস্টার নামে দুটি ব্র্যান্ডেরও। সব মিলিয়ে কারখানার সংখ্যা ৯। নতুন করে এসেছে চীনা ব্র্যান্ড রিয়েলমি। তাদের কারখানাও গাজীপুরে।
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, সস্তার স্মার্টফোন সংযোজন বা তৈরি কঠিন কিছু নয়। তাহলে আপনার জানা দরকার, স্যামসাংয়ের নোট ১০ প্লাস এখন বাংলাদেশেই সংযোজিত হয়। দেশে সংযোজন করে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকার ফোনের দাম ৩০ হাজার টাকা কমিয়েছে স্যামসাং। নতুন আসা এস-২০ সিরিজের ফোনও বাংলাদেশেই সংযোজন করছে স্যামসাং।
আপনি সংযোজনশিল্পকে গুরুত্ব দিতে চান না, তাহলে আপনার আরও কিছুটা জানা দরকার। আগেই বলেছি, ওয়ালটন স্মার্টফোন দেশেই তৈরি হয়। আরেকটি নতুন খবর জানুন, কয়েক মাস পরেই স্যামসাংয়ের মাদারবোর্ড বাংলাদেশে তৈরি শুরু হবে। সিম্ফনি নতুন কারখানা করছে। সেখানে মুঠোফোনের যন্ত্রাংশ, চার্জার ও হেডফোন উৎপাদন করা হবে। টেকনোর কারখানায় মাদারবোর্ড তৈরি হচ্ছে।
সব মিলিয়ে দেশে মুঠোফোনশিল্পের যাত্রাটি জোরেশোরে শুরু হয়েছে। উদ্যোক্তারা করছেন রপ্তানির চিন্তাও। একটি চালান যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে ওয়ালটন।
- ৯টি কারখানা
মুঠোফোন সেট তৈরিতে এগিয়ে ওয়ালটন। তারাই প্রথম দেশে কারখানার কাজ শুরু করে। আবার তারাই সবচেয়ে বেশি যন্ত্রাংশ উৎপাদন করে। গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের কারখানা উদ্বোধন করা হয় ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে। যদিও বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ২০১৮ সালের মাঝামাঝি। একই বছরের জুনে স্যামসাং ব্র্যান্ডের মুঠোফোন সংযোজন শুরু করে ফেয়ার ইলেকট্রনিকস লিমিটেড।
সিম্ফনি ব্র্যান্ডের মুঠোফোন বাজারজাতকারী এডিসন গ্রুপের কারখানাটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন করা হয়। তাদের মুঠোফোন বাজারে আসে ডিসেম্বরে।
এরপর টেকনো ব্র্যান্ডের মুঠোফোন বাজারজাতকারী ট্রানশান, ভিভো, অপো, ফাইভস্টার, উইনস্টার ও লাভা ব্র্যান্ডের ফোনের কারখানা হয়।
সব মিলিয়ে এখন অন্তত ৯টি কারখানা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বাজার হিস্যাধারীদের মধ্যে কারখানা করার ক্ষেত্রে বাকি রয়েছে মুঠোফোন ব্র্যান্ড হুয়াওয়ে, শাওমি এবং নকিয়া।
- রপ্তানির সম্ভাবনা কতটুকু
দেশে তৈরি স্মার্টফোনের প্রথম চালানটি এ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে যাবে। রপ্তানিকারক ওয়ালটন। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্র্যান্ড ওয়ালটনের কাছ থেকে স্মার্টফোন নিচ্ছে। ওয়ালটন দাবি করেছে, অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার (ওইএম) হিসেবে ওই ব্র্যান্ডটিকে স্মার্টফোন তৈরি করে দিচ্ছে ওয়ালটন। ফলে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ওয়ালটনের তৈরি স্মার্টফোনগুলো আমেরিকার বাজারে বিক্রি হবে।
সিম্ফনি দেশের চাহিদা পূরণ করে ২০২২ সালে রপ্তানি করার লক্ষ্য ঠিক করেছে। তারা মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে মুঠোফোন রপ্তানির সম্ভাবনা দেখছে। সিম্ফনি ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কায় ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে বলে জানান জাকারিয়া শহীদ।
টেকনো ব্র্যান্ডের মুঠোফোন বাজারজাতকারী ট্রানশান বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী রেজওয়ানুল হক বলেন, চীনে খরচ অনেক বাড়ছে। সেখানে একজন শ্রমিকের মজুরি ৫০ হাজার টাকা। বাংলাদেশে ৮ হাজার টাকা। ফলে ভারত ও ভিয়েতনামের পাশাপাশি বাংলাদেশ হতে পারে মুঠোফোন তৈরির কেন্দ্র ।