ভারতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের লুক-আউট নোটিশ উপেক্ষা করে জনাকুড়ি বাংলাদেশি নাগরিক তথা তাবলীগ জামাত সদস্যকে নীরবে ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল ওই রাজ্যের সরকার।
‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মি. ধনকড় আরও বলেছেন, রাজ্য সরকারের একটি কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে এই বিদেশি তাবলীগ সদস্যদের বাসে করে হরিদাসপুর (পেট্রাপোল) চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকানোর জন্য পাঠানো হয়েছিল – কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাগুলি তাদের আটকে দেয়।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী জগদীপ ধনকড় রাজ্যপাল হওয়ার আগে বিজেপির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এর আগে তিনি একজন লোকসভা এমপি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত বছরের মাঝামাঝি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের সঙ্গে তার সংঘাত চরমে ওঠে।
পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার যেভাবে করোনাভাইরাস মোকাবিলা কররছেন, বারবার প্রকাশ্যে তার কঠোর সমালোচনা করেছেন জগদীপ ধনকড়। কিন্তু বাংলাদেশি তাবলিগ সদস্যদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টাকে ঘিরে তিনি এখন যে অভিযোগ এনেছেন, তা রীতিমতো মারাত্মক।
যেভাবে কাঠগড়ায় বিদেশি তাবলিগরা
মার্চের মাঝামাঝি দিল্লিতে তাবলিগ জামাতের সদরদপ্তর মারকাজ নিজামুদ্দিনে আয়োজিত ধর্মীয় সমাবেশে যে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি সদস্য যোগ দিয়েছিলেন, সেটিকে ভারত ইতিমধ্যেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম প্রধান হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ওই সমাবেশের পর তাবলিগের অনেক সদস্যই ভারতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিলেন, যার মধ্যে অনেক বিদেশি নাগরিকও ছিলেন। তাদের খুঁজে বের করার জন্য দেশের নানা প্রান্তেই ব্যাপক অভিযান চালানো হয়, বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র জারি করে লুক আউট নোটিশ।
উত্তরপ্রদেশ সরকার এরকম বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি তাবলিগ সদস্যের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনে মামলাও করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পর্যটক ভিসা নিয়ে ভারতে ঢুকে তারা বেআইনিভাবে ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন, ধর্মীয় প্রচারণাও চালিয়েছেন।
যে বাংলাদেশি তাবলিগ সদস্যরা পশ্চিমবঙ্গে এসে ধরা পড়েছিলেন, তাদের রাখা হয়েছিল কলকাতার কাছে নিউটাউন এলাকার একটি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে। রাজ্যপালের অভিযোগ, অন্তত ১৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককেই ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেছিল রাজ্য সরকার।
ঘটনার যে বিবরণ দিচ্ছেন রাজ্যপাল
ধনকড় বলেন, ‘আমি খবর পেয়েছি দিন কয়েক আগে মদিনাত-আল-হাজ্জাজ নামে রাজ্যের ওই কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে বাসে করে তাদের হরিদাসপুর সীমান্তের চেকপোস্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তারা বাংলাদেশে ফিরে যেতে পারেন।’
রাজ্যপাল আরও বলেন, ‘কিন্তু সীমান্ত চেকপোস্টে তাদের কাগজপত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের সবার নামেই কেন্দ্রের জারি করা লুক-আউট নোটিশ আছে, অর্থাৎ আইনের চোখে এরা ফেরার। তখন ব্যুরো অব ইমিগ্রেশন ওই বিদেশি নাগরিকদের আটকে দেয়।’ রাজ্য সরকারের পক্ষে এখানে একটি অত্যন্ত ‘গুরুতর আইন লঙ্ঘনের ঘটনা’ ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাজ্যপাল পুরো বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অভিযোগ জানানোয় দিল্লিতে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো বা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগ এখন বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। কী করে লুক-আউট নোটিশ থাকা সত্ত্বেও এতজন বিদেশি নাগরিককে রাজ্য সরকার সীমান্ত পেরোনোর জন্য পাঠিয়ে দিল, মূলত সেটাই তারা তদন্ত করে দেখছেন।
রাজ্য সরকারের বক্তব্য
পশ্চিমবঙ্গ সরকার বা ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের কোনো নেতা-মন্ত্রী রাজ্যপালের তোলা এই গুরুতর অভিযোগ নিয়ে প্রকাশ্যে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। তবে পশ্চিমবঙ্গের একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী বলেছেন, ‘রাজ্যপালের এই অভিযোগের বিষয়ে উপযুক্ত পর্যায় থেকেই ঠিক সময়ে জবাব দেওয়া হবে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘তবে আমি এটুকু বলতে পারি, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন থেকে আমাদের সরকার যখন কাউকে ছেড়ে দিচ্ছে, তখন যাবতীয় নিয়মকানুন মেনেই সেটা করা হচ্ছে।’
গত মার্চের শেষে দিল্লির তাবলিগ জামাত সমাবেশকে যখন দেশের প্রধানতম ‘করোনা হটস্পট’ হিসেবে অভিহিত করা হয়, তার পর থেকেই সারা দেশে ইসলামোফোবিয়ার ঝড় উঠেছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য তাবলিগ সদস্যরা সত্যিই কতটা দায়ী, তা নিয়ে ভারতে বিতর্কও কম হয়নি। সূত্র-বিবিসি বাংলা।