বরগুনায় পাওনা টাকা চাওয়ায় স্বামী-স্ত্রীকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। বরগুনা পৌরসভায় ০৩ নং ওয়ার্ডে কড়ইতলা আশ্রয়ন সংলগ্নে এমন ঘটনায় ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। বরগুনা সদর থানায় উপস্থিত হয়ে মামলাটি দায়ের করেন আহত সোহরাফ সওদাগর এর ছেলে মো. রাসেল সওদাগর।
মামলায় আসামীর হলেন, হারাধন বনিকের ছেলে পরান কৃষ্ণ (৫০), পরান কৃষ্ণের ছেলে লিটন বনিক (২৫),মৃত কালাম এর ছেলে মো. রাসেল, জাকির হোসেনের ছেলে মো. রুবেল (২৪) ও মো. জসিম (২২), মানিক এর ছেলে নাইম (২৫), কবির মিস্ত্রী এর ছেলে রবিন(২০) এবং মৃত্যু বেল্লাল এর ছেলে মো. ইসরাফিল। সকলের বাসা বরগুনা পৌরসভার ০৩ নং ওয়ার্ড কড়ইতলা আশ্রয়নে।
মামলা সুত্রে জানা যায়, আসামিরা একদল ভুক্ত লাঠিয়াল ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক, তাহারা কোন আইন-কানুন ও সালিশ বৈঠক মানেন না। জখমি ১ নং সাক্ষী মোঃ সোহরাফ সওদাগর আমার পিতা এবং জখমি ২ নং সাক্ষী মোসাম্মৎ নুপুর বেগম আমার সৎ মা এবং ৩ নং সাক্ষী মোহাম্মদ রাজু আমার ছোট ভাই। আমার পিতা পেশায় একজব মৎস্য আড়োৎ ব্যবসায়ী, আমার ছোট ভাই রাজু উক্ত মৎস্য আড়তের ম্যানেজার হিসেবে নিয়োজিত আছে, আসামিরা আমাদের পূর্ব পরিচিত এবং প্রতিবেশী। আসামিদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো ছিল। অনুমান পাঁচ ছয় মাস পূর্বে ৫ নং আসামি মোহাম্মদ জসিম রং কেনার জন্য আমার ছোট ভাই রাজুর নিকট হইতে ৫৪,০০০/- টাকা ধার হিসেবে নেয়। উক্ত টাকা ৫ নং আসামি যথাসময়ের মধ্যে ফেরত না দিয়া আজ দিবে কাল দিবে বলিয়া ঘুরাইতে থাকে।
অতঃপর ঘটনার দিন ২২/০৩/২০২৪ তারিখ বিকেল অনুমান ৫ ঘটিকার সময় আমাদের বাসার সামনে পাকা রাস্তার উপরে মোহাম্মদ রাজু জসিমকে দেখিয়া তাহার নিকট টাকা চাইলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ৫ নং আসামী ডাক চিৎকার দিয়ে অন্যান্য আসামিদেরকে একত্রিত করিয়া দলবদ্ধ হইয়া লাঠি সোটা লোহার রড, দাঁড়ালো দা রামদা ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আমার ভাই ৩ নং সাক্ষীর পথ রোধ করিয়া এলোপাতাড়ি ভাবে মারপিট করিয়া তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে নীলা ফুলা জখম করে।
১ নং আসামীর হাতে থাকা ভারি লাঠি দিয়া রাজুকে খুনের উদ্দেশ্যে তাহার মাথা লক্ষ্য করিয়া পিটান দিলে ৩ নং সাক্ষী পেছনের দিকে সরে গেলে উক্ত পিটান ৩ নং সাক্ষীর নাকের উপর পরিয়া গুরুতর রক্তাক্ত হারভাঙ্গা জখম হয়। ৩ নং সাক্ষীর চিৎকার শুনিয়া ১,২ নং সাক্ষী দৌড়াইয়া আসিলে সকল আসামিরা তাদেরকেও এলোপাথারী ভাবে মারপিট করিয়া এক ও দুই নং সাক্ষীদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা জখম করে।
২ নং আসামীর হাতে থাকা দাও দিয়া ১নং সাক্ষীকে খুনের উদ্দেশ্যে তাহার মাথার উপরে কোপ দিয়া গুরুতর হার কাটা রক্ত যখন করে। ৩ নং আসামীর হাতে থাকা লোহার রড দিয়া ২ নং সাক্ষী কে খুনের উদ্দেশ্যে তাহার মাথা লক্ষ্য করিয়া পিটান দিলে উক্ত পিটান আমার মাতা ২নং সাক্ষীর ডান হাত দিয়া ফেরানোর চেষ্টা কালে তাহার ডান হাতের কব্জির উপর পরিয়ে গুরুতর হাড়ভাঙ্গা জখম হয়।
৪ নং আসামি ২ নং সাক্ষীর বাম হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলে কামড় দিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। ৫ নং আসামির হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে এক নং সাক্ষীর ডান হাঁটুর নিচে পিটান দিয়ে হাড়ভাঙ্গা জখম করে।৬ নং আসামীর হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে ১ নং সাক্ষীর বাম পায়ের হাঁটুর নিচে আঘাত করিয়ে ফাটা রক্তাক্ত জখম করে। ৭ নং আসামী দুই নং সাক্ষীর গলায় থাকা ১০ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন মুল্য অনুমান ৮০,০০০/- টাকা নিয়া যায়। ৮ নং আসামি ২ নং সাক্ষীর দুই কানে থাকা ছয় আনা ওজনের কানের দুল একজোড়া মূল্য অনুমান ৬০,০০০/- হাজার টাকা নিয়ে যায়।
সকল আসামিরা ২ নং সাক্ষীর পরনের কাপড়-চোপড় টানা হেচড়া করিয়া শ্লীলতাহানি ঘটায়। ১,২,৩ নং সাক্ষীদের ডাক চিৎকার শুনিয়া আমিও অন্যান্য সাক্ষীরা সহ আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে আসামিদের হাত হইতে আহতদের উদ্ধার করি। তখন সকল আসামিরা আমাকে ও সাক্ষীদেরকে খুন যখন করিবে মর্মে ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদান করে ঘটনাস্থল হইতে চলিয়া যায়।
আমি কতিপয় সাক্ষীদের সহায়তায় আহতদেরকে বরগুনা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসিয়া ভর্তি করি। জখমী সাক্ষীদের নিকট হইতে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়া শুনিয়া এবং ঘটনার বিষয়টি আমার নিকট আত্নীয় স্বজনদের সহিত আলাপ আলোচনা করিয়া থানায় আসিয়া এজাহার দায়ের করিতে বিলম্ব হইল। উক্ত বিষয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে আপনার মর্জি হয়।
বরগুনা সদর থানার অফিসার ইন চার্জ কে এম মিজানুর রহমান বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়ে মামলা নিয়েছি এবং ০১ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামীদেরকেও দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | বিকাল ৫:৪৯ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি