তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধিঃ জলবায়ু, পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বিশ্বব্যাপী যখন চলছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা এবং তা মোকাবেলায় পরিবেশের ভা’রসাম্য রক্ষায় যখন নেওয়া হচ্ছে নানামুখী পদক্ষেপ, বৃক্ষ রোপন কার্যক্রম ঠিক তখনই খোদ বন ও পরিবেশ জলবায়ু মন্ত্রীর এলাকায় নির্বিচারে নিধন করা হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ জলাভূমি হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের কান্দির ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী ২০ হাজার জলজ বৃক্ষ হিজল, করচ ও বরুন গাছ। যা প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অর্থায়নে পরিচালিত। হাওরের গাছ কেটে পরিবেশের এতো বড় ক্ষতির পরও রহস্য বা ভৌতিক কারণে নির্বাক জীববৈচিত্র ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগ। আজও পরিবেশ ধংসকারীদের বিরুদ্ধে তারা নেয়নি কোনো রকম আইনি ব্যবস্থা। এতে হাওরপাড়ের সাধারণ মানুষ ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জলজ বনের পাহারাদার আব্দুল মনাফ গত ৩০ মে ৭ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যার অনুলিপি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়েছে।অভিযোগ সুত্রে ও সরেজমিনে জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের অর্ন্তভুক্ত বড়লেখা উপজেলাধীন মালাম বিলের (মৎস্য জলাশয়) আয়তন ৪২৮.৯২ একর। ১৪২৭ বাংলা হতে ১৪৩২ বাংলা সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৪৩ টাকায় মালাম বিলটি ইজারা নিয়েছে বড়লেখা উপজেলার মনাদি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি। মালাম বিলের কান্দির (পাড়ে) সরকারী ভুূমিতে পরিবেশ অধিদপ্তর ২০০৩ সাল হতে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থায়নে হিজল, করচ, বরুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ রোপন করে। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো জলজ বৃক্ষের রক্ষনাবেক্ষন করে। বর্তমানে প্রাকৃতিক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সৃজিত জলজ উদ্ভিদগুলো ১০-১৫ ফুট উচ্চতার হয়েছে। যা হাকালুকি হাওরের ইসিএ এলাকার জীববৈচিত্র রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রোধে বিশেষ অবদান রাখছে। গত মে মাসের প্রথম দিকে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ইজারাদারের লোকজন বিলের বাঁধ নির্মাণের নামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ও প্রাকৃতিক জলজ বনের প্রায় প্রায় ২০ হাজার গাছ অবৈধভাবে কেটে নিয়েছে। এতে হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে।
হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র সংরক্ষণকর্মী (বনায়ন পাহারাদার) আব্দুল মনাফ ও আরফান আলী জানান, মালাম বিলের ইজারাদার সমিতির লোকজন এসকেভেটর দিয়ে মে মাসের প্রথম দিকে বিলের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশের সরকারী ভুমির জলজ বৃক্ষ নিধন করে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। আমরা বাঁধা দিলে তারা তা মানেনি। জীববৈচিত্র ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগের হাকালুকি বিট অফিসার তপন কুমার দেবনাথকে গাছ কেটে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলতে থাকার দৃশ্য দেখিয়েছি। তিনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় অসাধুরা বেপরোয়াভাবে অন্তত ২০ হাজার জলজ বৃক্ষ কেটেছে। এছাড়াও অন্যান্য বিলের পাড়ের গাছ কেটে অনেকেই বোরো চাষের জমি তৈরী করছে। পরে এ ব্যাপারে ৭ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
স্থানীয় সুত্র জানায়, বন বিভাগের বিট কর্মকর্তাকে বৃক্ষ নিধনকারীরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে।বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগের হাকালুকি বিট অফিসার তপন কুমার দেবনাথ জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিক মৌখিকভাবে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করি। তার নির্দেশনা না পাওয়ায় তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি।
মালাম বিলের ইজারাদার সমিতির পরিচালক জয়নাল উদ্দিন জানান, জলমহাল ইজারায় মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির শুধুমাত্র নাম ব্যবহার করা হয় তা সকলেই জানেন। নাম ব্যবহারকারী মানুষ গুলোই এখানকার গাছ কেটেছেন। এটা মোটেও ঠিক হয়নি। উনারাই পুনরায় গাছ লাগিয়ে দিবেন বলে কথা হয়েছে।
ইউএনও খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, হাকালুকির মালাম বিলের পাড়ের ব্যাপক জলজ বৃক্ষ কেটে ফেলার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সহকারী কমিশনার (ভুমি)কে নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।