বাংলাদেশের সব অঞ্চলেরই ভাষার টান আছে। শুনলেই বোঝা যায় তার এলাকাটি। ট্রেন যাত্রায় তর্কে জড়ানো বাংলাদেশের পরিচিত কালচার। প্রথমে আলাপচারিতা তারপর রাজনীতি, সবশেষে তর্কাতর্কি, মারামারিও হয়। ভাষার বিতর্কে এমন একজন যুক্ত হলেন বললেন ” আন্নেরা আ’র কথা শুনি মনে কইত্তেন হারেন আ’র বাড়ী নোয়াখালী, কিন্তুক না”। সহযাত্রীদের হাসির উদ্রেক হলেও চেপে যান কৌশলে। জেনেযান তার বাড়ীর ঠিকানা। ঢাকার ভাষাতেও রস আছে, অনেকেই উপভোগ করেন। এক ছেলে অন্য এক মহল্লায় গিয়ে গরম কথা বলায় ঐ মহল্লার একজন হঠাৎ ঘুষি বসিয়ে দেয়। ঘুষি খেয়ে উত্তেজিত ঢাকাইয়া ছেলেটি জবাব দেয় ” দেখ! বালা অইবোনা কইতাছি। আমি … বাজারের পোলা। সামনে বাড়াইলে খরাপ অইয়া যাইবো কইতাছি”। কথা শুনে ঐ ছেলেটি আরেকটি ঘুষি মারে। এবার ঢাকাইয়া ছেলেটি ক্ষিপ্ত হয়ে ” আরে হালায়! আবার ঘুষি দিলি? “বালা অইবোনা কইতাছি, তুই চিনছনা আমি কোন মহল্লার পোলা, খরাপ অইয়া যাইবো কইতাছি “। ছেলেটি এবার নাক বারাবর ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিলো। নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এলো। ঢাকাইয়া ছেলেটি রক্ত দেখে কেদে ফেললো বললো “….. পো! আমার নাক ফাটাইয়া দিলি? রাখ! আমোগ মহল্লার কাছ দিয়া যাইয়া দেহিছ, ছেপ দিয়া লৌড় দিমু!” বি এন পি’র রাজনীতি দেখে এখন ঢাকাইয়া ছেলেটির ” ছেপ দিয়ে লৌড় ” দেওয়ার মতোই মনে হয়। প্রতিদিন সাংবাদিক ডেকে অভিযোগ আর হুমকি ধমকি দেন সরকার উৎখাতের। জনগন তাদের সাথে আছে বলে হুংকার দেন কিন্তু, কিছু করার ক্ষমতা নেই। অবৈধ সংসদ বলে নিজেরাই সেই সংসদে গিয়ে দাবী করেন নিজেদের বৈধতা। গলাফাটিয়ে বলে বেড়ান কত ভাল সরকার ছিল তাদের! ভুলে যান নিজেদের সব কুকর্মের কথাটি। শীর্ষ নেতারা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে, সে কথাটিও ভুলে যান অবলিলায়। দেশের উন্নয়ন তারা দেখেননা, দেশ বিক্রি করে দিয়েছে বলে পুরানো অভিযোগের বাইরে নতুন কোন অভিযোগও আর খুঁজে বের করতে পারেনি। পদ্মা সেতু ভেংগে পরবে বলে দলনেত্রী সেতুতে না উঠার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এখন সেই পদ্মা সেতুও শেষ হয়ে এসেছে। রাজাকার, আলবদর আর আর-শামসের যূদ্ধাপরাধীদের বগলদাবা করে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার হুংকার দেন মাঝে মাঝে। এত সব মিথ্যা বলেও বলে বেড়ান ” সরকার কথা বলতে দেয়না”। ট্রেনের যাত্রীর মত সব শুনে লোকেরা মূখ ঢেকে হাসে। নির্বাচনে হেরে ঢাকাইয়া পোলার মত বলে ” হারলে কি অইবো আমরাই বড় দল”। আন্দোলনের ধারাটিও এখন ঢাকাইয়া ছেলেটির মত, ছেপ দিয়ে লৌড় দেওয়ার মত। করোনায়, বন্যায় দেশের মানূষ মরে গেলেও তাদের লক্ষ্য একটাই- ক্ষমতা। গনতান্ত্রিক পথে না পেরে এখন বক্র পথের সন্ধান করছে বি এন পি। তাদের কথা হল ” দেশ গোল্লায় যাক রসগোল্লার সাইজ যেন ছোট না হয়”।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
কানাডা ২৭ জুলাই ২০২০।