রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি ১১ নাইজেরিয়ান নাগরিকসহ বাংলাদেশি এক নারীকে গ্রেফতার করেছে। সংস্থাটি বলছে, চক্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রতারণার মাধ্যমে সারাদেশ থেকে গত দুই মাসে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
আজ বুধবার (২২ জুলাই) গ্রেফতারের পর দুপুরে সিআইডি সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো. রেজাউল হায়দার এসব তথ্য জানান।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- নন্দিকা ক্লিনেন্ট, ক্লেটাস আছুনা, ওইউকুলভ টিমটি, একিন উইসডোম, চিগোই, ইভুন্ডে গ্যাব্রিল ওবিনা, স্যালেস্টাইন প্যাট্রিক, ডুবুওকন সোমায়ইনা, ইয়েরেম প্রেসিওস, ওক উইসডম, মর্দি ন্যামডি এবং বাংলাদেশি রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন।
সিআইডির ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো. রেজাউল হায়দার বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিদের প্রতারণার শিকার হয়ে এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করে সিআইডি। তারা অভিনব উপায়ে বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব তৈরি করেন। বন্ধুত্বের একপর্যায়ে তারা ম্যাসেঞ্জার থেকে একটি উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দেন।
পরে ম্যাসেঞ্জারে এসব মূল্যবান সামগ্রীর এয়ারলাইন বুকিংয়ের ডকুমেন্ট পাঠান। উপহারের বক্সে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে বলেও ভুক্তভোগীকে জানানো হয়। তারা ভুক্তভোগীকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কাস্টম গুদাম থেকে সেগুলো রিসিভ করতে বলেন। এ সময় তাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন নিজেকে কাস্টমস কমিশনার পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীকে চার লাখ ২৫ হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে বলেন। তারা সেই টাকা কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে পরিশোধের জন্য চাপ দেন।
আর প্রতারকদের পাঠানো উপহার সংগ্রহ না করলে আইনি জটিলতার ভয় দেখায় প্রতারক চক্রটি।
সিআইডির ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ভুক্তভোগী একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে তাদের দেয়া বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তিন লাখ ৭৩ হাজার টাকা জমা দেন। একইভাবে গ্রেফতার ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে সারাদেশ থেকে দুই মাসের মধ্যে শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে এ ধরনের প্রতারণা করে আসছে। তাদের বাংলাদেশে (নাইজেরিয়ান) অবস্থানের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। পল্লবী থানায় এ সংক্রান্ত একটি মামলা করেছে সিআইডি।
জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, বাড়ির মালিকরা কোনো বিদেশি নাগরিককে বাড়িভাড়া দেয়ার আগে তাদের বৈধ কাগজপত্র ও পাসপোর্ট যাচাই করে বাড়িভাড়া দেবেন। ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত ব্যক্তির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করা থেকে বিরত থাকবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিআইডির ঢাকা মেট্রোর (পশ্চিম) বিশেষ পুলিশ সুপার কানিজ ফাতেমা এবং অর্গানাইজড ক্রাইমের জ্যৈষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার জিসানুল হক।