কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের দারিদ্র বিমোচন ঋণ কর্মসূচীর পরিবারভিত্তিক ঋণ কার্যক্রমের প্রায় দেড় কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে আত্নসাতের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এনিয়ে দফায় দফায় তদন্ত অনুষ্ঠিত হলেও এ অনিয়মের সাথে কে বা কাহারা জড়িত তা অজানাই রয়ে গেছে। ফলে আবারও ৫ সদস্য বিশিষ্ট অভ্যন্তরীণ অডিট টিম গঠন করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য অফিস আদেশ জারি হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের দারিদ্র বিমোচন ঋণ কর্মসূচীর পরিবারভিত্তিক ঋণ কার্যক্রমের আওতায় ৪৮০ কেন্দ্রে কয়েক কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। প্রথম প্রথম ভালো চললেও ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে সরকারী এ প্রতিষ্ঠানটির ঋণ কর্মসূচী মূখ থুবরে পরে। এই সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তারা কৌশলে বেশীর ভাগ কেন্দ্রে ভুয়া তালিকা প্রনয়ন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। কর্মচারীদের একাংশ বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও দুনীতিবাজদের ঘাটি শক্ত হওয়ায় তা চাপা পড়ে যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন পর প্রতিষ্ঠানটির প্রায় দেড় কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে আত্নসাতের বিষয়টি অভিযোগ আকারে উত্থাপিত হয়।
গত ৩১ মার্চ ২০২৪ ইং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের দারিদ্র বিমোচন ঋণ কর্মসূচীর পরিচালক এ কে এম মফিজুল ইসলাম সাক্ষরিত একটি অফিস আদেশে নতুন করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট অভ্যন্তরীণ অডিট টিম গঠন করা হয়েছে। অফিস আদেশে বলা হয়েছে, পরিবারভিত্তিক ঋণ কার্যক্রমের দৈনিক আদায় রেজিষ্টারে গরমিল, ঋণের মাষ্টার রেজিষ্টারের পরিবর্তে ডুপ্লিকেট রেজিষ্টার তৈরি করণ, ঋণীগ্রহীতাদের ব্যক্তিগত ঋণের আবেদন নথি না থাকা সহ ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রধান কার্যালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, উপজেলাটির পরিবারভিত্তিক কর্মসূচিতে ১ কোটি ২৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা খেলাপী রয়েছে।
সরেজমিনে ৪৬৭ নং কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, কেন্দ্রটিতে প্রথম দফায় ৪৫ জন সদস্যের জনপ্রতি ৭ হাজার টাকা করে ঋণ অনুমোদিত হলেও ১১/০৭/২০০৫ তারিখে ঋণের চেক প্রদান করা হয় ৩০ জনকে। অন্যদিকে একই স্মারক ব্যবহার করে অপর একটি ৪৬৭ নং কেন্দ্র গঠন করে ৪৫ জন সদস্যের নামে জনপ্রতি আবারও ৭ হাজার টাকা করে ঋণ বিতরণ দেখানো হয়। এরপর ২৮/০৫/২০২৪ ইং তারিখ দ্বিতীয দফায় একই স্মারক ব্যবহার করে দুইটি কেন্দ্রের একটিতে ৪৫ জন এবং অপরটিতে ৩২ জন সদস্যের মাঝে জনপ্রতি ৮ হাজার টাকার চেক বিতরণ দেখানো হয়। যাহা ওই কেন্দ্রের কেন্দ্র প্রধানসহ অন্যান্য সদস্যরা কিছুই জানেন না। চার দফায় ওই কেন্দ্রটি থেকে ওই অসাধু চক্রটি ১২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা উত্তোলন করলেও ৩০ জন সদস্য শুধুমাত্র এক দফায় জনপ্রতি ৭ হাজার টাকা করে মোট ২ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ প্রাপ্ত হন। সদস্যরা জানান, প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে নামে বেনামে ঋণ অনুমোদন করে চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বর্তমানে যার পরিমান দাড়িয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা।
৪৬৭ নং কেন্দ্রের কেন্দ্র প্রধান মজিবর রহমান বলেন, আমিসহ আমার কেন্দ্রের ৩০ জন সদস্য গ্রুপ এ্যানিমেটর সেহাব স্যারের মাধ্যমে একবার জনপ্রতি ৭ হাজার টাকা করে ঋণ উত্তোলন করি। পরবর্তীতে আমরা আর কোন ঋণ গ্রহন করি নাই। সদস্যরা তাদের ঋণের টাকা যথা সময়ে পরিশোধ করেছেন।
এ বিষয়ে তৎকালীন গ্রুপ এ্যানিমেটর সেহাব উদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে তৎকালীন অপর এক গ্রুপ এ্যানিমেটর ও বর্তমানে রাজারহাট উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ ইবরাহীম খলিল আনোয়ারী জানান, আমি সেসময় চন্দ্রখানা শাখায় কর্মরত ছিলাম। এবিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রধান কার্যালয় থেকে তদন্ত টিম গঠন হয়েছে বলে শুনেছি।
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ললিত মোহন রায় জানান, ডুপ্লিকেট রেজিষ্টার তৈরী করে ঋণ উত্তোলনের ঘটনাটি আমিও শুনেছি। এখন প্রধান কার্যালয় থেকে তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত হলে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৪:২১ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান (বাপ্পি)