তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ভারতের অন্ধ্র উপকূলের দিকে এগোচ্ছে ফণী। সন্ধ্যার পর গতিপথ পাল্টালে শনিবার (৪ মে) সকালে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। এ অবস্থায় সমুদ্রবন্দরগুলোকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গতিপথ পাল্টালে ভারতের উড়িষ্যা হয়ে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসতে পারে ফণী। তবে এটি যে কোনো সময় যে কোনো দিকে বাঁক নিতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তের পরিচালক শামছুদ্দিন আহমেদ জানান, ৬ ঘণ্টায় এর গতিপথের পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আঘাত হানার আশঙ্কা ৬০ শতাংশ। যদি পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে এলে ক্ষতি তুলনামূলক কম হবে, প্রাণহানি কম হবে, গাছপালা কম পড়বে, বৃষ্টি বেশি হবে। আর সরাসরি আসলে উচ্চগতি সম্পন্ন বাতাস আসবে, তার সঙ্গে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা থাকবে।
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া ‘ফণী’ বর্তমানে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
এর আগে বুধবার (১ মে) ভোরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১২৭৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ১২২৫ এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। যা ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হওয়া আকারে ১৮০ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রায় ৫৬ হাজার সিপিপি ভলান্টিয়ার আছেন, তাদেরকে এরই মধ্যে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে মানুষের অন্ন-বস্ত্র-চিকিৎসা-বাসস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য ইতোমধ্যেই প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের কাছে ২০০ মেট্রিকটন চাল পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার লক্ষে চট্টগ্রামসহ দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলায় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি দেড় মিটার বেড়েছে। এতে ফসল রক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, মঙ্গলবার থেকে চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় এবং ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে পানি দেড় মিটার বেড়েছে। আরো ছয় মিটার বাড়লে ফসল রক্ষা বাঁধের ভেতরে পানি ঢুকে পড়বে।
এতে ঝুঁকির মুখে রয়েছে ২০ ভাগ পাকা ধান। দ্রুত ধান কেটে নিতে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।