১৫০০ মানুষের কঙ্কাল উদ্ধার হল জাপানের পশ্চিমে ওসাকা শহরে খননকার্য চালিয়ে। গবেষকরা জানিয়েছেন, কঙ্কালগুলি কম করে ১৬০-১৭০ বছরের পুরনো বলে মনে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ওই এলাকায় ‘উমেদা টম্ব’ নামের একটা কবরখানা ছিল। পৃথিবীর বিখ্যাত সমাধিস্থলগুলির মধ্যে এটি একটি বলে মনে করা হয়। মেইজি যুগের ঠিক আগে, ১৮৫০-৬০ শতকে এই কবরখানার পত্তন হয়েছিল বলে জানা গেছে।
জাপানের সম্রাট মেইজির ৪৫ বছরের শাসনকালকে মেইজি যুগ বলা হয়। এই সময়কাল ১৮৬৮ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল। এই সময়কালকে জাপানের আধুনিকায়নের যুগ হিসেবে মনে করা হয়।শুধু তাই নয়, এই সময়ে বিশ্বের ইতিহাসে জাপান নিজেদের একটি প্রথম সারির ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করে। ১৯১২ সালে সম্রাট মেইজির মৃত্যুর পর সম্রাট তাইশো সিংহাসনে আরোহণ করলে এই যুগের অবসান হয় এবং তাইশো যুগের সূচনা হয়।
গবেষক ও ঐতিহাসিকরা জানিয়েছেন, ওই কবরখানায় শুধু মানুষের কঙ্কাল নয়, চারটি শুয়োরছানা, কিছু ঘোড়া, বিড়ালেরও কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে। মানুষের কঙ্কালগুলি দেখে ঐতিহাসিকদের আন্দাজ, ওসাকা ক্যাসেল টাউনের বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ৩০ বছরের নীচে। অসংখ্য শিশুর দেহও রয়েছে। হাতের ও পায়ের হাড় দেখে মনে হয়েছে, কঠিন কোনও অসুখ করেছিল তাদের। বড় কোনও মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে একসঙ্গে গণকবর দেওয়ার সম্ভাবনাই ক্রমে প্রকট হচ্ছে গবেষণায়।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওসাকা এলাকা চিরকালই ঐতিহাসিকদের কাছে বিশেষ আগ্রহের। জাপানের প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে নানা হদিস দিয়েছে এই এলাকার চিহ্ন। খনন কার্যও চলে মাঝে মাঝে। কিন্তু এত বছর আগের এমন সুবৃহৎ কবরখানা ঘুমিয়ে আছে ওই এলাকায়, তার আন্দাজ ছিল না কারও।
এই কঙ্কালগুলি আবিষ্কারের ফলে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে ওসাকা নিয়ে। তৎকালীন জীবনে কি তাহলে বড় প্রভাব ফেলেছিল কোনও মহামারী? ১৬০ বছর আগের ইতিহাস চরম দুর্লভ কিছু নয়। সেক্ষেত্রে এমন কোনও বিপর্যয়ের খবর মেলে না। তাহলে একসঙ্গে দেড় হাজার দেহ সমাহিত ছিল কী কারণে। মানুষের সঙ্গেই পশুদেরও কবর কেন দেওয়া হয়েছে। তাহলে কি একই রকমের কোনও সংক্রামক রোগে মৃত্যু হয়েছে পশু ও মানুষের?
অনেকে আবার বলছেন, প্রিয় পোষ্যদের একসঙ্গে কবর দেওয়া সে সময়ের রীতি ছিল হয়তো। কিন্তু পোষ্যদের তালিকায় শুয়োর থাকার কথা নয়। অথচ শুয়োরের কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে উমেদা টম্ব থেকে। মানুষের কঙ্কালের হাত ও পায়ে যেমন অসুখের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, সেরকমই পশুগুলির দেহেও কিছু আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন গবেষকরা।
যদি এই সূত্র ধরে কোনও মহামারী বা বিপর্যয়ের কথা জানা যায়, তবে ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় যোগ হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানেও নয়া কোনও সূত্র মিলতে পারে। সুত্রঃ দ্য ওয়াল।