তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অসহায় মহিলা প্রতারণার স্বীকার হয়ে ন্যায় বিচারের আসায় বিভিন্ন জায়গাতে ঘুরেও সুফল না পেয়ে অবশেষে মৌলভীবাজার জেলা দায়েরা জজ কোর্টের সরনাপন্ন।
অসম প্রেম যেনো কাল হয়ে গেলো শিল্পীর জীবনে অল্প বয়সে হিন্দু রীতি মেনে বিয়ে হয়েছিলো আজমিরগঞ্জের শংকর কুরীর সাথে। সুখের সংসারে বিয়ের ৩ বছরের মাথায় কুল জুড়ে আসে এক কন্যাশিশু। স্বামী ছিলেন আমেরিকা প্রবাসী, সুখেই চলছিলো সংসার। হঠাৎ সে সংসারে নেমে এলো অমাবস্যার অন্ধকার। ছোট বোনের বিয়েতে শশুড় বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি আসার পরই স্বামী শংকর আমার অজান্তে চলে যান ভারতে। আর কেউ খোঁজ খবর নেয় না, শিশু সন্তানকে নিয়ে পড়েন জীবনযুদ্ধে,কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। আর সে সময়ই শিল্পির জীবনে আসে এক অচেনা লোক, যিনি দুর্বল অবস্থায় সহযোগীতা করার ছোঁতায় পরিচয়ের এক পর্যায়ে প্রেম নিবেদন করে বসেন।স্বামী নিরুদ্দেশ অন্যদেশে, একাকী জীবনে ভরসার জায়গা তৈরী হবে ভেবে বিনিময় করে ফেলেন মন। বিয়ে করে ভিটেবাড়িতে তোলার কথা বলে গভীর প্রেমের প্রণয়ে মত্ত হয়ে পড়েন শিল্পী কুরী ও সুরঞ্জিত সোম।
মামলা সুত্রে ও শিল্পী কুরীর সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগের বরাতে জানা যায়, একপর্যায়ে শিল্পী কুরী (রিতা) সুরঞ্জিতের প্রেমের ফাঁদে পড়ে তার প্ররোচনায় স্বামী শংকরের সাথে আদালতের মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি ঘটান। ২০০৯ সালে সুরঞ্জিত রিতাকে বিয়ে করেন, তবে জাতপাতের ছোঁতায় নববিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে উঠাননি পিতৃগৃহে। ঘরে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কালক্ষেপন করতে থাকেন আর স্ত্রী ও সাথে থাকা শিশুসন্তানকে নিয়ে থাকতেন পর্যায়ক্রমে শহরতলীর উকিলবাড়ি ও সুরভীপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায়। হিন্দু এই নারী সুরঞ্জিতের ছলনা বুঝতে পারেননি তখনো। পিতার অসুখের কথা বলে স্ত্রীর সাথে রাত্রিযাপন করতেন না, দিনে শিক্ষকতার পেশা ফাঁকি দিয়ে এসে সময় কাটাতেন বাসায়। বিষয়টি বাসার মালিকও আঁচ করতে পেরেছিলেন। কিন্তু, এরপর প্রতারণায় নেশায় পেয়ে বসে বিয়ের তিন মাসের মাথায়ই ব্যাংক থেকে ঋণ তোলার মিথ্যে কথা বলে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন স্ত্রী শিল্পীর আর তা দিয়েই পরবর্তীতে তৈরী করেন ডিভোর্স লেটার। আর এভাবে ছলনা করেই চতুর সুরঞ্জিত ভোগ করতে থাকে রীতাকে। একপর্যায়ে স্ত্রী রীতাকে সংসারে অতিরিক্ত আয় – উপার্জনের জন্য চাপ দেয় সুরঞ্জিত, পরিবারে স্বচ্ছলতা আনয়নের কথা বলে ‘হাউজ মেইড’ হিসেবে স্ত্রী’কে পাঠিয়ে দেয় মধ্যপ্রাচ্যে। আর রীতা সেখানে যাওয়ার ৩/৪ মাস পরই বন্ধ করে দেয় সকল প্রকার যোগাযোগ।
প্রায় ২ বছর পর রীতা দেশে ফিরে আসলে কৌশলে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আর ঘরে তুলতে চায় না সুরঞ্জিত।সামাজিক নেতৃর্স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করেও বিষয়টির সুরাহা না হলে, চালচুলোহীন এই নারী শিশু সন্তানকে নিয়ে পড়েন মহাবিপাকে। ভাইয়ের আশ্রয়ে থেকে স্ত্রী’র অধিকার ফিরে পাবার প্রচেষ্টায় মৌলভীবাজার আদালতের (মামলা নং-২৫৮/১৭) স্মরনাপন্ন হন তিনি। অসহায় ও গরীব এই নারীর পক্ষে লিগ্যাল এইডের সহায়তায় আদালতে দাঁড়ান মৌলভীবাজারের বিজ্ঞ কৌশলী ও পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এএসএম আজাদুর রহমান ও আমিনুর রহমান পংঙ্খী। মামলা দায়েরের পরই জাম্বুরাছড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুরঞ্জিত সোমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। মামলা চলাকালে সুরঞ্জিত বিয়ের ৩ মাসের মাথায় স্ত্রীর ডিভোর্স প্রদানের বিষয়টি আদালতকে দেখালে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে শিল্পীর, যদিও হিন্দু আইনে ‘ডিভোর্স’ আইনসিদ্ধ নয় বলেই বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন। বিচারিক কার্যক্রমের একপর্যায়ে আদালতে সুরঞ্জিতের প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ পায়। মাননীয় আদালতের নির্দেশনা ছিলো স্ত্রী’কে সাথে করে সংসার জীবন শুরু করার। সে আদালত থেকে শিল্পিকে নিয়ে বের হয়ে মাঝপথে রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়, পরবর্তীতে শিল্পি বিষয়টি আদালতকে অবহিত করলে ‘ আদালতের নির্দেশ অমান্যের’ দায়ে মৌলভীবাজার জেলে ৪ দিনের সাজা ভোগ করে।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে অবহিত করেন প্রতারণার শিকার হওয়া শিল্পী কুরী। এরপরও সে ক্ষান্ত হয়নি সে। সুত্রের খবর, বাসার কাজের মহিলা মিনুর সাথে রয়েছে তার অবৈধ ও অন্তরঙ্গ সখ্যতা – তা জানতে পেরে সম্প্রতি শিল্পী কুরী শ্রীমঙ্গল থানায় অভিযোগ দাখিল করেন। আর সে অভিযোগের প্রেক্ষিতেই শ্রীমঙ্গল থানা – পুলিশ অভিযান চালিয়ে তার ভাড়া বাসায় গিয়ে প্রায় দু’ঘন্টা চেষ্টার পর স্থানীয় পৌরসভার কমিশনারের উপস্থিতিতে ঘরের ভেতরের বাথরুমে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় পেয়ে যায় মিনুকে। এরপর পুলিশ বাসার মালিক ও কমিশনারের জিম্মায় এ নারীকে দিয়ে আসে। পরবর্তীতে এই কাজের মহিলা কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় কমিশনার মো. ছাদ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা রয়েছে, আমি সুরঞ্জিতের যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছি। সে বাসায়ও নেই।
এ ব্যাপারে সুরঞ্জিত সোমের বক্তব্য জানতে তার ব্যক্তিগত ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে মুঠোফোন খোলা পাওয়া যায়, তবে তিনি কল রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারী) এই মামলায় রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ন্যায় বিচারের জন্য আদালতের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে শিল্পী।