ডিবিএন ডেস্কঃ গত ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা বোমা বিস্ফোরণের মামলায় ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আজিজুল হক রানা ওরফে শাহনেওয়াজ ওরফে রুমান (৪৪) কে গতকাল মঙ্গলবার (১ মার্চ) রাজধানীর খিলক্ষেত বাজার মসজিদের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) তাকে গ্রেপ্তার করে।
ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন জানান, ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আজিজুল হক রানা ওরফে শাহনেওয়াজ ওরফে রুমান গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তারকৃর আজিজুল হক দীর্ঘ ২১ বছর বিভিন্ন ছদ্মবেশে নানা পেশার আড়ালে নিজেকে আত্মগোপনে রাখেন। এভাবে তিনি অত্যন্ত গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কয়েকবার দেশ ত্যাগের পরিকল্পনাও করেছিলেন আজিজুল হক। তবে ব্যর্থ হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ভিন্ন ভিন্ন নামে আত্মগোপনে ছিলেন। নিজেকে লুকিয়ে রাখতে কখনো টেইলারিং, কখনো মুদি দোকানি, বই বিক্রেতা, গাড়িচালক ও সবশেষ প্রিন্টিং ও স্ট্যাম্প প্যাড বানানোর কাজ করতেন।
গ্রেপ্তারের সময় আজিজুল হকের কাছ থেকে জিহাদি বই, ২টি মোবাইল ফোনসেট, পেনড্রাইভ ও কম্পিউটারের হার্ডডিক্স উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে ১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আরও ৪ জন আসামি- মো. ইউসুফ, মো. লোকমান, শেখ মো. এনামুল ও মো. মিজানুর রহমান পালিয়ে আছেন। তাদেরকেও আমরা গ্রেপ্তার করতে পারব বলে আশা করছি।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের পাশে একটি চায়ের দোকানের পেছনে ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের জন্য মঞ্চ নির্মাণের সময় মাটিতে পুঁতে রাখা ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পাওয়া যায়। বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শেখা হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরদিন ৮০ কেজি ওজনের আরও ১টি বোমা উদ্ধার করা হয় কোটালীপাড়ার হেলিপ্যাড থেকে। ওইদিন থেকে ঠিক এক দিন পর নিজের নির্বাচনী এলাকায় দাদার নামে প্রতিষ্ঠিত ওই কলেজ মাঠে জনসভায় শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। ওই ঘটনায় কোটালীপাড়া থানার পুলিশ বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেছিল।
পুলিশ তদন্তের পর ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় ২০০১ সালে। এরপর ২০১০ সালে গোপালগঞ্জ আদালত থেকে মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট।