আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে নবীন প্রজন্মের ভোটারদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে বলেছেন, তাঁদের মেধা ও মননকে ব্যবহার করে তিনি বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের, নতুন ভোটারদের যে আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশকে নিয়ে, আমরা সেই আকাঙ্ক্ষাটাই পূরণ করতে চাই। তরুণদের মেধা ও মননের আরো বিকাশ ঘটিয়ে দেশকে আরো উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল তাঁর ধানমন্ডিস্থ সুধা সদনের বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বান্দরবান এবং কিশোরগঞ্জের জনসভায় প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন। নতুন ভোটার যারা এই প্রথমবারের মত ভোট দিতে যাচ্ছেন তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন আগামী ৩০ ডিসেম্বর তাঁরা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। নৌকা মার্কার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রকৃতির একটি সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমরা আজকে মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি, দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। জনগণ যখন নৌকা মার্কায় ভোট দেয় আর আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন সত্যিকারভাবে দেশের উন্নয়ন হয়। আর উন্নয়নের ছোঁয়াটা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়। আমরা কোন সংঘাত চাইনা শান্তি চাই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, শান্তি না থাকলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই আমরা সবসময় এটাই চাই দেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে, শান্তিতে জীবন-যাপন করবে, উন্নত হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলা আমাদের অঙ্গীকার। কারণ তারুণ্যই শক্তি, তারুণ্যই দেবে সমৃদ্ধি। তাই আমরা তরুণদের মেধা ও মননের আরো বিকাশ ঘটিয়ে দেশকে আরো উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আমরা সরকারে আসার পরে এই পার্বত্য অঞ্চলে মোবাইল ফোন চালু করেছি। বিদ্যুতের সমস্যা দূরীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যে সব এলাকা এখনো আলোকিত হয়নি সেসব এলাকাও আলোকিত করে দেবে তাঁর সরকার। তিনি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ এ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর উদ্যোগে এ নবীন প্রজন্মের সঙ্গে তাঁর সরাসরি প্রশ্নোত্তরমূলক মতবিনিময় অনুষ্ঠান ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’র প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমি বসেছিলাম নতুন প্রজন্মকে নিয়ে। তারা সেখানে আমাকে যেমন প্রশ্ন করেছে তেমনি আমিও তাঁদের প্রশ্ন করেছিলাম তারা বাংলাদেশটাকে কেমন বাংলাদেশ হিসেবে দেখতে চায়, কিভাবে উন্নত করতে চায়। তাই নতুন প্রজন্মের কেউ যদি প্রধানমন্ত্রী হয় তবে, প্রথম কাজটা কি করবে? আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি মনে করি আজকের নবীন প্রজন্ম অনেক, অনেক বেশি জ্ঞানী, অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে কারণ তাঁরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার মধ্যদিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করছে।’ রাঙ্গামাটিতে তাঁর সরকার ইতোমধ্যেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা মেডিকেল কলেজও করে দিয়েছি। শিক্ষার যে সুযোগ সেটা আমরা গোটা পার্বত্য অঞ্চলেই করে দিয়েছি। কাজেই খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান- এই প্রত্যেকটি জেলার মানুষ যেন এই উন্নয়নের সুফলটা পায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি এ সময় ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি এবং উপবৃত্তি প্রদানে তাঁর সরকারের উদ্যোগও তুলে ধরেন। তিনি সারাদেশে ডিজিটাল সেন্টার করে তরুণদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ এবং কর্মসংস্থান ব্যাংক সৃষ্টি করে বিনা জামানতে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদানে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, পর পর দু’বার সরকারে থাকায় আমাদের উন্নয়নের একটা ধারাবাহিকতা বজায় আছে এবং এ্ উন্নয়নের সুফলগুলো আমরা মানুষের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি। যার ফলে আমরা দারিদ্র বিমোচনের সফলতা অর্জন করেছি। দারিদ্রের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গৃহহীনকে ঘর-বাড়ি করে দিচ্ছি, এদেশে আর একটি মানুষও দরিদ্র থাকবে না। একটি দেশের উন্নয়নের গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি এ সময় পার্বত্য অঞ্চলে পণ্যের উৎপাদন বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। এই জনপদটি সবসময় অবহেলিত থাকলেও তাঁর সরকার কিশোরগঞ্জের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা কিশোরগঞ্জের জনসভায় বলেন, আমি জানি কিশোরগঞ্জবাসী সবসময় নৌকায় ভোট দেয় এবং আমি চাই আপনারা এবারো নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। যাতে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে সেই স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার সুফল যেন প্রত্যেকটি ঘরে পৌঁছে প্রতিটি মানুষের জীবন-মান উন্নত হয়- এটাই আমাদের লক্ষ্য। তাঁর সরকার টানা ১০ বছর রাষ্ট্র পরিচালনায় আজকে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যের কোন অভাব নেই উল্লেখ করে তিনি দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো উন্নয়ন, যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান এবং সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচিতে তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই নির্বাচনী ইশতেহারে আমাদের উন্নয়ন কর্মসূচি এবং আগামী পাঁচ বছর কিভাবে দেশ চলবে তাঁর রূপরেখা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘কাজেই আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষের উন্নয়ন হয়। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। কারণ, দেশের মানুষের জীবন-মান যাতে পরিবর্তন হয় সেজন্যই আওয়ামী লীগ কাজ করে। যার সুফল আজকে দেশের মানুষ পাচ্ছে।’ শেখ হাসিনা পুনরায় ভোটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নৌকা এবং মহাজোটের প্রার্থীদের বিজয়ী করে কিশোরগঞ্জে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির বিজয়ের যে ঐতিহ্য সেই ঐতিহ্য ভোটাররা ধরে রাখবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এসময় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি তাঁর রোগমুক্তি কামনা করেন। তাকে বিজয়ী করতে এবং কিশোরগঞ্জে নৌকার অন্যান্য প্রার্থীদের বিজয়ী করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নৌকার পক্ষে একজোট হয়ে কাজ করারও তিনি আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগ এবং মহাজোটের প্রার্থীরাও জনসভায় বক্তৃতা করেন।