ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা করা হলে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের কোনো ‘অস্তিত্ব থাকবে না’ বলে হুঁশিয়ার করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ এর অংশ হিসেবে অবস্থান কর্মসূচিতে সারজিস বলেন, ছাত্র জনতার বিপ্লবের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব করার চেষ্টা যদি করে, আমরা বলে দিচ্ছি, ৫ আগস্ট যা দেখেছেন, এর পরে আপনাদের আর অস্তিত্ব থাকবে না। যদি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চান, তাহলে ভুলেও ছাত্র জনতার বিপক্ষে গিয়ে একটি কথা বলার স্পর্ধা দেখাবেন না।
এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে সারজিসের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসেন একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা শাহবাগ মোড়ের মাঝখানে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। মিনিট পাঁচেক শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করে মিছিল নিয়ে তাঁরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে এসে অবস্থান নেন।
তিনি বলেন, “যে ফ্যাসিস্ট সরকার ১৬ বছর ধরে এদেশের মানুষকে শোষণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে বিপ্লব ঘটিয়েছে। যেই জায়গায় কেউ যদি আবার প্রতিবিপ্লবের কথা ভুলেও মুখে নেয়, তার মানে পুরো ছাত্র জনতার বিপক্ষে একটি ঘোষণা দিচ্ছে।”
আন্দোলনের সময় ‘গণহত্যা ও নির্যাতনের’ অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচারের দাবি জানিয়ে সারজিস বলেন, “আমরা বিগত ১৬ বছরে দেখেছি, এই বাংলাদেশে যদি একটা পিলারও হত, সেটার ক্রেডিট একজন মানুষকে দেওয়া হত। কারণ সবকিছু নাকি তার নির্দেশে হয়।
“তাহলে এই যে বিগত দেড় মাসে বাংলাদেশে যতগুলো হত্যা হয়েছে, যতগুলো খুন হয়েছে, সেগুলোর নির্দেশ কোথায় থেকে এসেছে? আমরা জানি প্রত্যেকটি হুকুম খুনি হাসিনার কাছ থেকে এসেছে। আমাদের স্পষ্ট দাবি হচ্ছে, আমরা খুনি হাসিনার বিচার চাই।”
আন্দোলনকারীরা আদালতকে ‘শেখ হাসিনার মত করে ব্যবহার করতে চায় না’ মন্তব্য করে এই সমন্বয়ক বলেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে বেশিরভাগ মামলার বিচার হয়েছে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অথবা প্রতিহিংসার কারণে’।
“আমরা এমন একটি আন্তর্জাতিক মানের বিচার নিশ্চিত করব, যেটি নিয়ে পুরো বিশ্বের কেউ কোনো প্রশ্ন না করতে পারে। সেই জায়গা থেকে আমাদের দাবিটি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে। আমরা চাই, বিশ্ববাসী দেখুক ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা কত মানুষ খুন করেছে।”
এ সময় আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “জয়ের (শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়) বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, তারা গণবিমুখ হয়ে মোদীর উপর নির্ভর করছে। জয় মোদীকে রিকোয়েস্ট করছে বাংলাদেশে দ্রুত সময়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে। চিন্তা করুন, মানুষ থেকে তারা কতটা বিচ্ছিন্ন।
সরকারপতনের পর ‘আওয়ামী লীগের প্রতিবিপ্লব’ ঠেকাতে চার দফা দাবি নিয়ে মঙ্গলবার থেকে ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সারাদেশে ‘সর্বাত্মক অবস্থান’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকার শাহবাগ চত্বরে সকাল ১০টায় জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকরা। তবে আন্দোলনকারীদের অধিকাংশ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থান করছেন।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম