‘জীবাণুর ওষুধ প্রতিরোধী ক্ষমতা’ বা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) নিয়ে উদ্বেগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে বিশ্বে। ‘নীরব মহামারি’ বা এএমআর নামে পরিচিত এই রোগে বর্তমানে প্রতি বছর ১১ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যদি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তবে এই সংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে ৩ কোটি ৯ লাখে পৌঁছে যেতে পারে।
সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের নিয়ে চতুর্থ উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন করেছে সৌদি আরব। এই সম্মেলনটি বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক নেতৃত্ব ও বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করেছে। জেদ্দায় বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) শুরু হয়ে শনিবার (১৬ নভেম্বর) পর্যন্ত এই সম্মেলন চলবে।
এই ক্রমবর্ধমান সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া জোরদার করার লক্ষ্য স্থির করেছে সৌদি আরব। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহাদ আল-জালাজিল উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, ‘এএমআর সব বয়সের মানুষকে হুমকির মুখে ফেলে, যা মানুষ ছাড়াও প্রাণী, উদ্ভিদ, পরিবেশ এবং খাদ্য নিরাপত্তাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।’ এই হুমকি নিয়ন্ত্রণে সফল হতে হলে আমাদের একটি সামগ্রিক ও যৌথভাবে ‘ওয়ান হেলথ’ পলিসি গ্রহণ করতে হবে, যা প্রগতির পথে বাধাগুলো পদ্ধতিগতভাবে সমাধান করবে।’
এই বৈঠকটি সৌদি আরবের জন্য এএমআর সংক্রান্ত সমস্যাগুলো মোকাবিলায় তিনটি নতুন উদ্যোগ ঘোষণা করার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করছে।
যেসব কারণে এএমআর হয়ে থাকে: অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার বা কোনো প্রয়োজন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক নিলে এমনটি ঘটে থাকে। চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া। খামারে প্রাণী পালনে ওজন বাড়ানো ত্বরান্বিত করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার। হাসপাতাল বা ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প থেকে অ্যান্টিবায়োটিক দূষণের ফলে এমনটি হয়ে থাকে।
এএমআর কতটা হুমকিস্বরূপ: এএমআর বর্তমানে একটি গভীর বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট হয়ে উঠছে। এর কয়েকটি নেতিবাচক প্রভাব নিচে তুলে ধরা হলো।
মোকাবিলায় করণীয়: এটি মোকাবিলায় একটি ‘ওয়ান হেলথ’ পলিসি প্রয়োজন, যা মানুষ, প্রাণী এবং পরিবেশ এই তিনটি ক্ষেত্রের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করে। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
গবেষণা ও নতুন ওষুধ আবিষ্কারে বিনিয়োগ: বৈশ্বিক পর্যায়ে এ সংক্রান্ত নীতি এবং আইন কার্যকর করা। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে অবহেলা করা হলে এটি একটি ‘নীরব মহামারি’ হিসেবে মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। এজন্য সময়োপযোগী ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম