মোঃ সদরুল কাদির (শাওন), সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:: পবিত্র ঈদুল-আযহাকে সামনে রেখে সাতক্ষীরায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কামাররা। দম ফেলবারও সময় নেই তাদের। দিন-রাত টুং টাং শব্দ ভাসছে কামারপাড়ায়। আর মাত্র ১ দিন পরই আগামী ১২ আগষ্ট সোমবার মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল-আযহা । কোরবানির পশু জবাই ও মাংস টুকরো করার জন্য দা, বটি, ছুরি, বেকি, কোপা অপরিহার্য। আর এসব চাহিদা মিটানোর জন্য দা, বঁটি,বেকি, কোপা ও ছুরিসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিরোলস ভাবে তৈরি করে যাচ্ছে কামাররা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সদর উপজেলার আবাদের হাট, আলিপুর বাজার, কদমতলা হাট, ছোনকা বাজার, মাহামুদপুর বাজার,আবাদের হাট, খান পুর সহ বিভিন্ন হাট-বাজারে কামারপাড়ায় হাপারে আগুনের তাপে ঘাম ঝরছে কামারের শরীর। ইস্পাত কঠিন হাত দুটি আঘাত করছে লোহার বস্তুতে। শক্ত আঘাতে বদলে যাচ্ছে লোহার ধরন। তৈরি হচ্ছে কোরবানির গোশত কাটার অস্ত্র।
কামারপাড়ার এ দৃশ্য নতুন নয়। তবে কোরবানির ঈদকে ঘিরেই বাড়ে তাদের এ কর্মব্যস্ততা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বঁটি, ছুরি, কাটারি, দা, বেকি, কুঠার, খুন্তা ও কোপাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বানাচ্ছে কামাররা। এসব ব্যবহার্য জিনিস স্থানীয় চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে পাইকারী ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার-শিল্পের দুর্দিন চললেও আসন্ন পবিত্র ঈদুল-আযহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সুলতানপুর এলাকার কামার শিল্পী আব্দুল গফুর কর্মকার জানান, এক সময় কামারদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে ফলে আমাদের তৈরি যন্ত্রাদির প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হারাচ্ছে। হয়তো বা এক সময় এই পেশা আর থাকবেনা। তাছাড়া এখন এই পেশায় নতুন লোক আসতে চায় না। ভারী কাজ তায় লেবার পাওয়া যায় না।
তিনি আরো বলেন, গোশত কাটা বা চামড়া ছড়ানোর ছোট-বড় ৮ থেকে ১০ ধরনের ছুরি-চাকু তৈরি করেন। বিভিন্ন প্রকারভেদে ২০ টাকা থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। এছাড়াও বঁটি-দা ১২০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১২০০-১৪০০ টাকা দামে বিক্রি হয়। পশু জবাইয়ের মাঝারি ছুরি ২৫০-৬৫০ টাকা, বড় ছুরি ৫০০-১,০০০ টাকাও বিক্রি করেন তারা।
কদমতলা বাজারের সলিম কামার বলেন, আমার বাপ-দাদার মূল পেশা ছিল এটা। তাদের পেশার সূত্র ধরে আমার জীবনেরও শেষ মূহুর্তে এই পেশা ধরে রেখেছি। পবিত্র ঈদকে সামনে রেখে সারাদিন চাকু, বঁটি, ছুরি, কোপা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছি। এমন কাজ সারা বছর থাকে না। এই সময় আমাদের আয় ভাল হয়। সবমিলিয়ে আমরা ভাল আছি।