নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানি ও নির্যাতনে ঘটনায় প্রধান আসামিসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা থেকে এবং আরেক আসামি দেলোয়ারকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব।
র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, ‘গতকাল (রোববার) দিবাগত রাতে বাদলকে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে আর দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জের চিটাগং রোডের একটি বাস থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল করছিল।’
গৃহবধূর শ্লীলতাহানি ও নির্যাতনের ঘটনায় গতকাল রাতে ৯ জনকে আসামি করে বেগমগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারসহ ৫ তরুণ এ ঘটনা ঘটালেও তার নাম নেই আসামিদের তালিকায়। এজাহারে, বাদল (২২)-কে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া রহিম (২০), আবুল কালাম (২২), ইসরাফিল হোসেন (২২), সাজু (২১), সামছুদ্দিন ওরফে সুমন (৩৯), আবদুর রব ওরফে চৌধুরী মিয়া (৪৮), আরিফ (১৮) ও রহমত উল্যা (৪১)-এর নাম উল্লেখসহ ৭/৮ অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে বিকেলে আসামি আবদুর রহিমকে আটক করা হয়েছিল। এরপর মামলা করা হলে গতকাল রাতে আসামি রহমত উল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়। এরই মধ্যে নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে এসেছে পুলিশ।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) আলমগীর হোসেন জানান, এলাকার কয়েকজন বখাটে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যে দলেরই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বাসায় ২০ থেকে ২৫ দিন আগে এ ঘটনা ঘটলেও গতকাল রোববার গৃহবধূকে নির্যাতনের ওই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিওচিত্রে ভুক্তভোগী গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে তাঁর মুখমণ্ডলে উপর্যুপরি লাথি ও বেধড়ক মারধর করতে দেখা যায়। এ সময় গৃহবধূ হামলাকারীদের বহুবার পায়ে ধরে এবং ‘বাবা, বাবা’ বলে ডাকলেও নির্যাতন বন্ধ রাখা হয়নি। বরং তাঁর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানসহ সব স্থানে লাঠি দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করে। তারা এ সময় তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। এলাকার বাদল, কালাম, দেলোয়ারসহ আরো কয়েকজন ব্যক্তি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড় থেকে দুই মাস আগে এলাকার একদল বখাটে ওই গৃহবধূকে কুপ্রস্তাব দেয় এবং শারীরিক সম্পর্কের চেষ্টা করে। এভাবে তারা আরো কয়েকবার তাঁকে কুপ্রস্তাব দেয় বলে গৃহবধূ জানান। পরে বখাটেরা শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে কোনো একসময়ে তাঁকে বেদম মারধর করে ভিডিও ধারণ করে। এভাবে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলেও তারা গৃহবধূকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আবারও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে অবশেষে গতকাল রোববার তারা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ফলে তা ভাইরাল হয়ে পড়ে।
জানা যায়, ওই গৃহবধূর সঙ্গে তাঁর স্বামীর দীর্ঘদিন বনিবনা ছিল না। তবে সম্প্রতি স্বামী তাঁর কাছে ফিরে আসেন। তাঁদের দুটি সন্তান রয়েছে। ঘটনার সময় ওই নারীর স্বামীকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন গৃহবধূ।