নেত্রকোণা প্রতিনিধিঃ নেত্রকোণার জেলার আটপাড়া উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া সৌজন্যের “জীবন রক্ষাকারী মাস্ক” টাকার বিনিময়ে। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিবাবকদের মাঝে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, মহামারি করোনা শুরুর পর থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জেলার সর্বত্র সচেতনতামূলক প্রচারণা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণ করা হয়। জেলা সদরসহ জেলা ১০ উপজেলায় সমাজের নানা শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য বিনামূল্যে পর্যাপ্ত পরিমান মাস্ক দেওয়া হয়।
জেলার আটপাড়া উপজেলায়ও দেওয়া হয়। ব্যতিক্রম হয় জেলার আটপাড়ায়। উপজেলায় ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ওই সমস্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জেলা প্রশাসনের দেওয়া সৌজন্যের মাস্ক টাকার বিনিময়য়ে নিতে হয়েছে। প্রতিটি মাস্কের মূল্য ধরা হয়েছে ১৭ টাকা করে। এরই মধ্যে উপজেলার প্রায় ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের কথায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মাস্ক সংগ্রহ করেছেন।
নেত্রকোণার আটপাড়ার দেওগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেঘারকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সবহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের মূখে লাগানে রয়েছে সবুজ রঙের মাস্ক। ওই সমস্ত মাস্কের গায়ে লেখা রয়েছে ‘নেত্রকোণা জেলা প্রশাসন সৌজন্যে আটপাড়া উপজেলা প্রশাসন।
দেওগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাজা মজিবুর রহমান জানান, তার বিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে ১০০ মাস্ক নিয়েছেন। প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ১৭ টাকা করে। একই ধরনের কথা বলেন মেঘারকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃনাল চন্দ্র পন্ডিত ও ষ¦ল্প শুনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজমুল হক। তারা উভয়েই বলেন, আমরা ৫০ পিস করে মাস্ক নিয়েছি। প্রতি পিস মাস্কের দাম ধরা হয়েছে ১৭ টাকা করে। আটপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও মল্লিকপুর শুনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি রাহাত বিশ্বাস বলেন, শুনেছি মাস্ক দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। সৌজন্যের ওই মাস্ক দিতে কে টাকা নেওয়া হয়েছে বলতে পারব না।
আটপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেলিমা আক্তার খাতুনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনও রিসিভ করেন নি।
আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা সুলতানা বলেন, বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীরা সার্জিকেল মাস্ক ব্যবহার করছিল। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয় কাপড়ের মাস্ক ব্যবহারের। উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে কাপড়ের মাস্ক তৈরী করা সম্ভব নয়। তাই জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া আমার কাছে মওজুদ থাকা মাস্ক দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আরও যে মাস্ক দেওয়া হবে তখন টাকা নেওয়া হবে না।
আটপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী খায়রুল ইসলাম বলেন, করোনা থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য আমরা কাজ করছি। শিক্ষার্থীদের মাঝে সৌজন্যের মাস্ক টাকার বিনিময়ে দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে কেউ আমার সাথে কোন ধরনের আলোচনা করে নি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু মাস্ক ইউএনওর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমাকে জানিয়েছে। তবে কিভাবে সংগ্রহ করেছে তা বলেনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, মহামারি করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে বিনামূল্যে মাস্ক দেওয়া হয়েছে। টাকার বিনিময়ে মাস্ক দেওয়ার জন্য বলা হয়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যদি টাকা নেওয়া হয়ে থাকে তা ঠিক হয়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।