প্রকাশিত চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, ৪৬ বছর বয়সী জর্জ ফ্লয়েডের করোনাভাইরাস ছিল কিন্তু মিনিয়াপলিস পুলিশ তার ঘাড়ে আট মিনিটেরও বেশি সময় ধরে মাথা নিচু করে চেপে ধরে রাখার কারনে ‘কার্ডিওপালমোনারি’ অ্যাটাকের শিকার হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বুধবার হেনেপিন কাউন্টি মেডিকেল এক্সামিনারস’র পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, ফ্লয়েড ৩ এপ্রিল কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে তার এই নির্মম মৃত্যুর জন্য প্রত্যক্ষভাবে করোনা ভাইরাস দায়ী এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আর এ ঘটনাকে একটি শ্বাসরোধজনিত হত্যাকাণ্ড হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
ময়নাতদন্তে বলা হয়েছে, মিনিয়াপলিস পুলিশ অফিসার ডেরেক চৌভিন আট মিনিটেরও বেশি সময় ধরে যখন ফ্লয়েডকে হাঁটু দিয়ে ঘাড় চেপে রেখেছিল তখন তার ঘাড়ের রক্ত পেশী সংকুচিত হওয়ার কারনে তিনি হৃদপিন্ডের ‘কার্ডিওপালমোনারি’ অ্যাটাকের শিকার হন। মুলত এর কারনেই তার মৃত্যু হয়।
ময়নাতদন্তে উল্লেখ করা হয় যে, ফ্লয়েডের আগে হৃদরোগ ছিল এবং হৃদপিন্ডের সিস্টেমে ফেন্টানেল এবং মেটেফেটামিন ছিল – যা হৃদপিন্ডের একটি গুরুত্বপুর্ন সমস্যা হিসেবে গন্য করা হয়। আসলে এটিকে হৃদপিন্ডের ধমনীর সংকীর্ণতা বলা হয়। এছাড়া তার ফুসফুসের অবস্থা স্বাভাবিক দেখা গিয়েছে।
ময়নাতদন্ত থেকে আরও জানা যায়, ফেন্টানেল সমস্যাজনিত লক্ষণগুলির মধ্যে গুরুতর সমস্যা হিসেবে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা এবং খিঁচুনি হতে পারে। তবে গত সপ্তাহের প্রাথমিক ময়নাতদন্তের পরে বলা হয়েছিল ফেন্টানেল সমস্যাজনিত কারনে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোন প্রমাণ চিকিৎসা বিজ্ঞানে নেই।
সোমবার, মেডিকেল এক্সামিনারস’র কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল যে, ফ্লয়েডের মৃত্যু শ্বাসরোধেই হয়েছিল তবে তাদের দাবি তার শরীরের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি খারাপ ছিল আগে থেকেই। আর সে ছিল নেশাগ্রস্ত। এসবই তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
তবে স্বতন্ত্র ময়নাতদন্তকারী দু’জন চিকিৎসক এবং তাঁর পরিবারের পক্ষে দু’জন অ্যাটর্নি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বিপক্ষে দ্বিমত পোষণ করেন। তারা জানান, ফ্লয়েডের শরীরের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিলনা যা তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
ফ্লয়েড পরিবারের দ্বারা করানো একটি ময়নাতদন্তের ফলাফলে জানা যায়, ফ্লয়েড ঘাড় এবং পিঠের পেশী সংকোচনের কারণে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান। যখন ফ্লয়েড মাটিতে পড়ে ছিল আর তখন তার ঘাড়ে হাঁটু গেড়ে থাকা অফিসার তাকে শুধু যে মেরে ফেলেনি তা নয় সাথের দু’জন কর্মকর্তা তাদের শরীর দিয়ে তার পায়ে প্রচণ্ডভাবে চেপে ধরে রেখেছিল।
তবে তাদের করানো ময়নাতদন্তে কোন ধরনের টক্সিকোলজি সম্পর্কে জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২৫ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা শহরে পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েড মারা যান। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে পুলিশ অফিসার ডেরেক চৌভিন ফ্লয়েডকে আটকাতে গিয়ে তার ঘাড়ে হাঁটু চাপতে দেখা যায়। “আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না” এই কথাটি ভিডিওতে কয়েক মিনিট ধরে শোনা যাচ্ছিল। পরে তাকে হেনেপিন কাউন্টি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হলেও চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফ্লোয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পরে গত সপ্তাহে তৃতীয় ডিগ্রি হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগে শেতাঙ্গ চৌভিনকে মিনিয়াপলিস পুলিশ বিভাগ থেকে বরখাস্ত করা হয়।
বুধবার মিনেসোটা অ্যাটর্নি জেনারেল কিথ এলিসন চৌভিনের বিরুদ্ধে ২য়-ডিগ্রি হত্যার অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং ঘটনাস্থলে অপর তিন কর্মকর্তাকেও হত্যাকাণ্ডে সহায়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করে অভিযোগ গঠন করেন।
অর্থাৎ সুপরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনা না ঘটলেও ফ্লয়েডকে গ্রেফতারের পর ডেরেকসহ অন্যরা তাকে মেরে ফেলায় উদ্যত হন-এটাই হচ্ছে সেকেন্ড ডিগ্রির অভিযোগ।
উল্লেখ্য, আদালতে তা প্রমাণিত হলে ডেরেকের ৪০ বছরের কারাদন্ড এবং সহযোগী তিনজনের ১০ বছর করে কারাদন্ড হতে পারে। সুত্রঃ ডেইলি মেইল।
ডিজিটাল বাংলা নিউজ/ডিআর / মোস্তাফিজুররহমান