“নিষিদ্ধ আমি”
কলমে-আবু শ্যামা
[উৎসর্গ – দেশের সকল বীরাঙ্গনা মা কে]
এক হায়েনার ভোগের আনন্দ আর নগ্ন নৃত্যের উল্লাসে আর এক কিশোরীর দীর্ঘশ্বাস,লজ্জা আর ঘৃনায় আমার জন্ম।
আমার জন্মের শুক্রাণু যখন কোটি কোটি শুক্রাণুর সাথে যুদ্ধ করছিলো।
তখন আমার চারপাশে হায়েনারা দল বেঁধে উল্লাসে ফেটে পড়ছিলো।
বন্দুকের টিগার চেপে ফাঁকা গুলি ছুটছিলো।
আর গুলির খোসাগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে কিশোরীর মুখে বুকে পড়ছিলো।
তার সাথে হায়েনার হিংস্র দৃষ্টি আর বিষাক্ত নখে টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়েখুঁড়ে খাচ্ছিলো নরম শরীর।
হায়েনার বিষাক্ত নখে আর দাঁতে কিশোরীর দেহের মাংস ছিঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছিল।
তার সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে রক্তাক্ত করছিলো বাংলার ধূলিকণা।
আর আকাশ বাতাস ভারি করে বজ্রপাত হচ্ছিল।
ঠিক তখনই বজ্রপাত এ বাকি শুক্রাণু মরে গেলো।
আর আমিই বেঁচে গেলাম।
অতঃপর কিশোরীর ডিম্বাণুতে আমি প্রবেশ করলাম।
তারপর আমি শুক্রাণু থেকে রক্তপিন্ডতে যতদিনে পরিণত হচ্ছিলাম।
ততদিনে হায়েনার দল পরাজিত হয়ে এই বাংলা ছেড়েছে।
আর আমাকে ফেলে গেছে এক কিশোরীর গর্ভে।
তারপর, তারপর সেই কিশোরী ফিরে যেতে পারেনি পরিবারে।
কারণ সমাজ তাকে কলঙ্কিনী বলে দূর দূর করে তারিয়ে দিয়েছে।
কিশোরীর ঠাঁই হয়েছে রেললাইনের ধারে বস্তির পাশে সিমেন্টের বড় পাইপের ভেতরে।
হঠাৎ একদিন রেলগাড়ীটা মাটি কাঁপিয়ে ফেটেফুটে সিমেন্টের পাইপের পাশ দিয়ে চলছিল।
আর বাংলার মাটি ফেটে যেন দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেলে।
আর আকাশে কালো মেঘ ভারি হয়ে আসছিল।
বজ্রপাত এ আকাশ পাতাল ফেটে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছিলো।
ঠিক তখনই আমি কলঙ্কিনী কিশোরীের গর্ভ থেকে মুক্তি পেলাম।
আমার নাকি জন্ম হলো! সেই সাথে বজ্রপাত হওয়ার কারণে নাকি এই কিশোরী মা হলো।
নইলে আমার জন্ম কিভাবে হবে কোন বুড়ী দাইমা নেই তো ধারে কাছে।
আর নবজাতকের কান্নার আওয়াজ যেন এই বাংলার মানুষের কারো কানে না যায়।
এ সমাজ যেন না জানে এক নিষিদ্ধ জন্ম হলো।
বাহ্ প্রকৃতির কি অপূর্ব লীলাখেলা।
প্রকৃতির সাথে কিশোরী মা যেন পাপ মুক্ত হতে চললো।
এই সমাজের কেউ যে নবজাতকের জন্মে খুশি হবে না।
আর খুশি হয়ে দুই কানে আজান দিতেও আসবে না।
এই প্রতৃতির সবই তো জানা।
তাই আমার জন্মের সময় প্রকৃতি বজ্রপাত এ ফেঠে পড়েছে।
প্রকৃতি আমার জন্ম কাউকে জানতে দেয়নি।
প্রকৃতি জানতে চায়নি এই সমাজ জাতি আর গোষ্ঠী কে।
আমার জন্ম বাংলার কেউ জানতেও পারলো না।
তাই বুঝি বজ্রপাত এর সাথে মুষলধারে বৃষ্টির হুংকার।
সাক্ষী রইলো এই বাংলার আকাশ, বাতাস, নদী-নালা খালবিল আর কাকপক্ষী,এরা তো সব বোবা।
বস্তুত তারা কাউকে কলঙ্কিনী বলে দূরদূর করে তাড়িয়ে দেয় না।
গাছপালারাও স্বাক্ষীর দলে যোগ দিলো।
সেই বজ্রপাত এ কিশোরী মায়ের জমাটবদ্ধ নিষিদ্ধ রক্ত সব বের হয়ে গেলো।
সেই সাথে তার সব কলঙ্ক ধুয়েমুছে শেষ হয়ে গেলো।
আর তার পবিত্র আত্মা পাপের জেলখানা থেকে মুক্তি পেলো।
মুক্তি নিয়ে ঐ আকাশে উড়ে যেতে যেতে চিৎকার করে বলতে লাগলো আমি মুক্ত আজ আমি স্বাধীন।
আজ আমার সামনে রুখে দাঁড়াবে কে।
আছে কোন হায়েনার দল,আছে, থাকলে সব নিপাত যাক।
আমার আত্মা আজ পাপ মুক্ত।
আজ থেকে আমাকে আর কেউ কলঙ্কিনী বলতে পারবে না, কেউ নাহ, হা হা হা।
তার অট্রহাসিতে সব বজ্রপাত থেমে গেলো।
আর আমার জন্মের সাক্ষী কোন বাঙালী রইলো না।
দেখলাম ভারি বৃষ্টির কারণে আমার কিশোরী মায়ের
সাথে আমি ভেসে যাচ্ছি।
কারণ আমার মায়ের সাথে আমার নাড়ি কাটা হয়নি।
হঠাৎ দেখলাম আমার কিশোরী মা ভেসে যাচ্ছে আর আমি রয়ে গেছি।
এবার আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটা মাদি কুকুর।
সে আমার মায়ের সাথে বাঁধা নাড়ি টা কামড়ে ছিঁড়ে দিয়েছে।
তারপর আমার ঠোঁট জোড়ায় কিছু একটা স্পর্শ করলো।
আমি না বুঝেই ঠোঁটের ব্যবহার শিখে গেলাম।
তারপর থেকেই জানলাম আমি কুকুরের দুধ খেয়ে বেঁচে আছি।
এই কুকুরই আমার বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।
এর বাইরে আমি কিছু দেখি নাই, জানি নাই, কোন প্রয়োজনও নাই, নূন্যতম।
এই জন্মই আমার আজন্ম পাপ।
আমার যে জন্ম হলো তোমাদের সমাজে তাকে কি বলে?
আর আমিও কোন সমাজের নই।
কিংবা তোমাদের মত পরিবারের কেউ।
তাহলে তোমরা আমাকে কি বলবে?
আমি কি হায়েনার বাচ্চা নাকি কলঙ্কিনী কিশোরী মায়ের জারজ সন্তান,নাকি কুকুরের বাচ্চা।
কে আমি,কি আমি,কি আমার পরিচয়।
নাকি শুধুই প্রকৃতির বজ্রপাতের সৃষ্টি!
যদি পারো প্রশ্নের জবার দিয়ে যেও,
কে আমি,
কি আমি,
কি আমার পরিচয়!
কুকুরের নাকি হায়েনার বাচ্চা, নাকি আমি শুধুই প্রকৃতির লজ্জা!
দিন চেয়েছে উত্থান, রাত চেয়েছে মুক্তি।
[ ৭১ এর সম্মানে ৭১ বাক্য ব্যবহার]
“নিষিদ্ধ আমি”কলমে-আবু শ্যামা[উৎসর্গ – দেশের সকল বীরাঙ্গনা মা কে]এক হায়েনার ভোগের আনন্দ আর নগ্ন নৃত্যের উল্লাসে আর এক কিশোরীর দীর্ঘশ্বাস,লজ্জা আর ঘৃনায় আমার জন্ম।আমার জন্মের শুক্রাণু যখন কোটি কোটি শুক্রাণুর সাথে যুদ্ধ করছিলো।তখন আমার চারপাশে হায়েনারা দল বেঁধে উল্লাসে ফেটে পড়ছিলো।বন্দুকের টিগার চেপে ফাঁকা গুলি ছুটছিলো।আর গুলির খোসাগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে কিশোরীর মুখে বুকে পড়ছিলো।তার সাথে হায়েনার হিংস্র দৃষ্টি আর বিষাক্ত নখে টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়েখুঁড়ে খাচ্ছিলো নরম শরীর।হায়েনার বিষাক্ত নখে আর দাঁতে কিশোরীর দেহের মাংস ছিঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছিল।তার সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে রক্তাক্ত করছিলো বাংলার ধূলিকণা।আর আকাশ বাতাস ভারি করে বজ্রপাত হচ্ছিল।ঠিক তখনই বজ্রপাত এ বাকি শুক্রাণু মরে গেলো।আর আমিই বেঁচে গেলাম।অতঃপর কিশোরীর ডিম্বাণুতে আমি প্রবেশ করলাম।তারপর আমি শুক্রাণু থেকে রক্তপিন্ডতে যতদিনে পরিণত হচ্ছিলাম।ততদিনে হায়েনার দল পরাজিত হয়ে এই বাংলা ছেড়েছে।আর আমাকে ফেলে গেছে এক কিশোরীর গর্ভে।তারপর, তারপর সেই কিশোরী ফিরে যেতে পারেনি পরিবারে।কারণ সমাজ তাকে কলঙ্কিনী বলে দূর দূর করে তারিয়ে দিয়েছে।কিশোরীর ঠাঁই হয়েছে রেললাইনের ধারে বস্তির পাশে সিমেন্টের বড় পাইপের ভেতরে।হঠাৎ একদিন রেলগাড়ীটা মাটি কাঁপিয়ে ফেটেফুটে সিমেন্টের পাইপের পাশ দিয়ে চলছিল।আর বাংলার মাটি ফেটে যেন দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেলে।আর আকাশে কালো মেঘ ভারি হয়ে আসছিল।বজ্রপাত এ আকাশ পাতাল ফেটে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছিলো।ঠিক তখনই আমি কলঙ্কিনী কিশোরীের গর্ভ থেকে মুক্তি পেলাম।আমার নাকি জন্ম হলো! সেই সাথে বজ্রপাত হওয়ার কারণে নাকি এই কিশোরী মা হলো।নইলে আমার জন্ম কিভাবে হবে কোন বুড়ী দাইমা নেই তো ধারে কাছে।আর নবজাতকের কান্নার আওয়াজ যেন এই বাংলার মানুষের কারো কানে না যায়।এ সমাজ যেন না জানে এক নিষিদ্ধ জন্ম হলো।বাহ্ প্রকৃতির কি অপূর্ব লীলাখেলা।প্রকৃতির সাথে কিশোরী মা যেন পাপ মুক্ত হতে চললো।এই সমাজের কেউ যে নবজাতকের জন্মে খুশি হবে না।আর খুশি হয়ে দুই কানে আজান দিতেও আসবে না।এই প্রতৃতির সবই তো জানা।তাই আমার জন্মের সময় প্রকৃতি বজ্রপাত এ ফেঠে পড়েছে।প্রকৃতি আমার জন্ম কাউকে জানতে দেয়নি।প্রকৃতি জানতে চায়নি এই সমাজ জাতি আর গোষ্ঠী কে।আমার জন্ম বাংলার কেউ জানতেও পারলো না।তাই বুঝি বজ্রপাত এর সাথে মুষলধারে বৃষ্টির হুংকার।সাক্ষী রইলো এই বাংলার আকাশ, বাতাস, নদী-নালা খালবিল আর কাকপক্ষী,এরা তো সব বোবা।বস্তুত তারা কাউকে কলঙ্কিনী বলে দূরদূর করে তাড়িয়ে দেয় না।গাছপালারাও স্বাক্ষীর দলে যোগ দিলো।সেই বজ্রপাত এ কিশোরী মায়ের জমাটবদ্ধ নিষিদ্ধ রক্ত সব বের হয়ে গেলো।সেই সাথে তার সব কলঙ্ক ধুয়েমুছে শেষ হয়ে গেলো।আর তার পবিত্র আত্মা পাপের জেলখানা থেকে মুক্তি পেলো।মুক্তি নিয়ে ঐ আকাশে উড়ে যেতে যেতে চিৎকার করে বলতে লাগলো আমি মুক্ত আজ আমি স্বাধীন।আজ আমার সামনে রুখে দাঁড়াবে কে।আছে কোন হায়েনার দল,আছে, থাকলে সব নিপাত যাক।আমার আত্মা আজ পাপ মুক্ত।আজ থেকে আমাকে আর কেউ কলঙ্কিনী বলতে পারবে না, কেউ নাহ, হা হা হা।তার অট্রহাসিতে সব বজ্রপাত থেমে গেলো।আর আমার জন্মের সাক্ষী কোন বাঙালী রইলো না।দেখলাম ভারি বৃষ্টির কারণে আমার কিশোরী মায়েরসাথে আমি ভেসে যাচ্ছি।কারণ আমার মায়ের সাথে আমার নাড়ি কাটা হয়নি।হঠাৎ দেখলাম আমার কিশোরী মা ভেসে যাচ্ছে আর আমি রয়ে গেছি।এবার আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটা মাদি কুকুর।সে আমার মায়ের সাথে বাঁধা নাড়ি টা কামড়ে ছিঁড়ে দিয়েছে।তারপর আমার ঠোঁট জোড়ায় কিছু একটা স্পর্শ করলো।আমি না বুঝেই ঠোঁটের ব্যবহার শিখে গেলাম।তারপর থেকেই জানলাম আমি কুকুরের দুধ খেয়ে বেঁচে আছি।এই কুকুরই আমার বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।এর বাইরে আমি কিছু দেখি নাই, জানি নাই, কোন প্রয়োজনও নাই, নূন্যতম।এই জন্মই আমার আজন্ম পাপ।আমার যে জন্ম হলো তোমাদের সমাজে তাকে কি বলে?আর আমিও কোন সমাজের নই।কিংবা তোমাদের মত পরিবারের কেউ।তাহলে তোমরা আমাকে কি বলবে?আমি কি হায়েনার বাচ্চা নাকি কলঙ্কিনী কিশোরী মায়ের জারজ সন্তান,নাকি কুকুরের বাচ্চা।কে আমি,কি আমি,কি আমার পরিচয়।নাকি শুধুই প্রকৃতির বজ্রপাতের সৃষ্টি!যদি পারো প্রশ্নের জবার দিয়ে যেও,কে আমি,কি আমি,কি আমার পরিচয়!কুকুরের নাকি হায়েনার বাচ্চা, নাকি আমি শুধুই প্রকৃতির লজ্জা!দিন চেয়েছে উত্থান, রাত চেয়েছে মুক্তি।[ ৭১ এর সম্মানে ৭১ বাক্য ব্যবহার]