তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন’কে সামনে রেখে নৌকার প্রার্থীর সাথে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সরকারি শিক্ষকরা সহ রেল স্টেশন মাস্টার ও। জনসংযোগ, সভা, সমাবেশে প্রকাশ্যে নৌকার প্রার্থীর জন্য ভোট চাইছেন তারা।
এই শিক্ষকরাই ভোটেরদিন বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রিজাডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাডিং অফিসার বা পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। একারণে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে তাদের ছবি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সর্বস্তরে। এইসব ছবি ভিডিওতে দেখা গেছে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। যাদের মধ্যে রয়েছেন- শ্রীমঙ্গল শহরতলীর চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহর তরপদার, উত্তর বরুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অঞ্জন দেব, রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক অলক পাল প্রমুখ বাদ পড়েনি শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশন মাস্টার শাখাওয়াত হোসেন।
সর্বশেষ শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) উত্তর বরুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অঞ্জন দেব উপজেলার গন্ধব্যপুর এলাকায় নৌকার প্রার্থীর সাথে গন সংযোগ ও নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেন। গত বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে নৌকার নির্বাচনী সভায় অতিথি হিসেবে অংশ নেন জহর তরপদার এবং রেল স্টেশন মাস্টার শাখাওয়াত হোসেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বারবার জহর তরফদারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। ঠিক একই ভাবে রেল স্টেশন মাস্টার শাখাওয়াত হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোন কেটে দিয়েছেন বারংবার।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যোগ দেয়া অন্য প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সতন্ত্র প্রার্থী আফজল হক।
আফজল হক জানান, আমরা একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের কাছে বার বার দাবি জানাচ্ছি। আমরা লক্ষ্য করছি শ্রীমঙ্গলের বেশ কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক প্রকাশ্যে নৌকার প্রার্থীর হয়ে ভোট চাইছেন। গনসংযোগ, সভা সমাবেশ করছেন, এরাই আবার নির্বাচনে প্রিজাডিং কর্মকর্তা ও পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। আমি এই বিষয় টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এটি সুষ্ঠ নির্বাচনে বাধা হচ্ছে।
সতন্ত্র প্রার্থী প্রেমসাগর হাজরা বলেন, নির্বাচনে যেহেতু সরকারি চাকুরিজীবীরা কারো পক্ষ হয়ে প্রচারে অংশ নিতে পারে না, সেহেতু বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে দেখতে হবে। এভাবে সরকারি কর্মচারী ও কর্মকর্তারা এক পক্ষের হয়ে প্রচারণা চালাতে পারেন না। এর মানে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।
অন্য আরেক প্রার্থী, মিজানুর রব তিনি বলেন,এমন ভাবে যদি সরকারী চাকুরী জীবিরা নির্বাচনে জরিয়ে প্রচারনা চালিয়ে যান তাহলে আমরা কিভাবে ভেবে নিতে পারি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে ! নিরপেক্ষতার প্রশ্নটি থেকেই যায় !!অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কিভাবে সম্ভব এমন আলামত দেখার পর?
শ্রীমঙ্গল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো.জাফর আল সাদিক বলেন, শিক্ষক শুধু নয়, নির্বাচনী প্রচারণায় রাষ্ট্রের কোন সরকারি চাকুরিজীবী অংশ নিতে পারবে না। কোন শিক্ষক যদি এমনটা করে থাকেন, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের উপ নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা তপনজ্যোতি অসিম বলেন, আমি একটু বাইরে আছি তাই অভিযোগের কপি এখনো দেখিনি। ঘটনা সত্য হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, কোন সরকারি কর্মচারী কর্মকর্তা প্রচারে অংশ নিতে পারেন না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সরকারি যে কোন কর্মস্থলে থাকুন তা কখনো গ্ৰহনযোগ্যে নহে।