মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁওয়ের গন্ডারগড় গ্রামে মধ্যযুগীয় কায়দায় একটি হিন্দু পরিবারকে এক ঘরে করে সামাজিকভাবে বিচ্ছন্ন করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানা যায় মিথ্যা কুৎসা রটিয়ে গন্ডারগড় গ্ৰামের রানা সেন, পিতাঃ জ্ঞানেন্দ্র সেন (খোকা) এর পরিবারকে প্রায় এক মাস ধরে স্থানীয়ভাবে তথাকথিত সমাজপতিদের নির্দেশে সামাজিক বিচ্ছিন্ন বা এক ঘরে রেখে সামাজিক নিপীড়ন করা হচ্ছে।
সামাজিক, ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে তাদেরকে বঞ্চিত করা, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা সহ অভিযুক্তরা অভিযোগকারীকে নিজ বাড়ি থেকে বের হতে বাধ্য করেছেন বলেও অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী রানা সেন জানান, বিগত কিছুদিন পূর্বে পারিবারিক কলহের জের ধরে তার স্ত্রী একমাত্র শিশু সন্তান সহ পিত্রালয়ে চলে যান। পরে এর সমাধান হলে আবার নিজ স্বামীর গৃহে ফিরে আসেন। আর এতেই বাদে বিপত্তি, সাধেন সমাজের কিছু কুচক্রী সমাজপতিরা। ঐ গৃহবধূর নামে নানান কুৎসা রটিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নিয়মে প্রায়শচিত্ত করে মাথা মুন্ডন করা, সমাজপতিদের পা ধরে ক্ষমা চাওয়া সহ বিভিন্ন রাজবংশীয় নিয়মে আমল নামা জারি করেন অভিযুক্তরা। এতে রাজী না হওয়ায় তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের পরিবারকে ঐ তথাকথিত সমাজপতিরা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে এক ঘরে করে রাখার নির্দেশ দেয় বলে তিনি জানান। এরা আমাকে আমার বাড়িতে যেতে বাঁধা দিচ্ছেন। তাদের কারনে আমি একটি ভাড়া বাসায় আমার স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকতে হচ্ছে।
পরে রানা সেনকে সামাজিক নিপীড়নের মাধ্যমে নিজ বসত বাড়ি থেকে স্ত্রী সন্তান সহ বের হতেও বাধ্য করা হয় বলেও জানা গেছে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল ভুক্তভোগীরা অন্য স্থানে একটি ভাড়া বাসায় থাকছে বলে জানায় তারা। এছাড়া সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে স্থানীয় একটি মন্দিরে পূজায় যোগ দিতে গেলে রানা সেনের পিতা বৃদ্ধ জ্ঞানেন্দ্র সেনকে অভিযুক্তদের ইন্ধনে একদল লোক শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে মন্দির থেকে বের করে দেওয়ারও অভিযোগ করা হয়।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী রানা সেন গত রবিবার (১০ই সেপ্টেম্বর) অভিযুক্ত ৯ জনের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন। মৌলভীবাজার জজ কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট প্রিতম দত্ত রানা সেনের পক্ষে এই লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেন।
অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার গন্ডার গ্রামের সিতাংশু দে (পিতাঃ যামিনী দে), অনিমেষ দত্ত (পিতাঃ নিখিল দত্ত), পার্শ্ববর্তী তাজপুর গ্রামের শ্রীকেন্দু দে (পিতাঃ নিবাস দে), মনোজ দত্ত (পিতাঃ বিনোদ দত্ত), মুকুল সেন (পিতাঃ দিগেন্দ্র সেন), দক্ষিণা দে (পিতাঃ দিগেন্দ্র দে), নিতাই দত্ত (পিতাঃ গোপাল দত্ত), খন্দখার গ্রামের চন্দন ধর (পিতাঃ নিরঞ্জন ধর) ও টিংকু ধর (পিতাঃ বিধান ধর।
এ বিষয়ে ১নং অভিযুক্ত সিতাংশু দে বিষয়টি অস্বীকার করেন। এ ধরনের কোন ঘটনা তিনি জানেন না বলে জানান। এ বিষয়ে ৪ নং অভিযুক্ত মনোজ দও, প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে রানা সেনের স্ত্রীর বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ করেন। তাকে সামাজিক ধর্মীয় নিয়ম মেনে ঘরে উঠার কথাও বলেন, এক ঘরে করে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সত্যতা স্বীকার করেন। রানা সেনের পিতা বৃদ্ধ জ্ঞানেন্দ্র সেনকে অভিযুক্তদের ইন্ধনে একদল লোক শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন এ বিষয়টি সত্য নয় বলে তিনি জানান। মন্দির থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে বলেন এখন থেকে জ্ঞানেন্দ্র সেনের বাড়ির একজনকে দিয়ে এখান থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ৮ নং অভিযুক্ত নিতাই দও এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
মানবাধিকার কর্মী তপন দও বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। একজন বৃদ্ধ লোককে নির্যাতন করা ও তাঁহার পরিবারের সাথে এরকম আচরণ করা উচিত হয় নাই। আমি এই ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
টিলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আজিজ বেগ ও চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মালিকের কাছে এ নিয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি জানেন না বলে তিনি জানান । ঘটনাটি খতিয়ে দেখে পরবর্তীতে জানাতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
টিলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবদুল মালিক এর মোবাইল নম্বর টি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
*** আজ ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৮:৩৫ | শনিবার ***
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি