নিম্নমানের কাগজ ব্যাবহার করায় প্রাথমিকের প্রায় ছয় লাখ মানহীন বই বাতিল করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বই বিতরণের আগেই এই ব্যবস্থা নিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এদিকে এনসিটিবি জানিয়েছে, ছাপা বইগুলোতে প্রতি বছরই কিছু ত্রুটি বের হয় এবং প্রেসগুলো তা সংশোধন করে ফের ছাপিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেয় না। স্পর্শকাতর এমন বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে প্রেস মালিকরা শোধরাবেন না।
আর এবার নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের চার কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য মোট ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৩৯৪টি বই ছাপছে এনসিটিবি। এর মধ্যে মাধ্যমিকের বই প্রায় ২৪ কোটি ১১ লাখ। এবার প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ৩৭ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কম দর দিয়ে কাজ নিয়েছিলেন প্রেস মালিকরা।
এবার ৩০ লাখ ২২ হাজার ১৭৪টি বই ছাপার কাজ পেয়েছিল বগুড়ার ‘মা সিস্টেম কম্পিউটার্স প্রিন্টার্স অ্যান্ড প্যাকেজিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ছাপার মান যাচাই বাছাইয়ের জন্য সরকার নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ‘ইনডিপেনডেন্ট ইন্সপেকশন সার্ভিসেস’ যাচাই করার পর দেখা গেল নিম্নমানের কাগজ দিয়ে প্রেসটি প্রায় সাড়ে তিন লাখ বই ছাপায়। তাই ওই সব বই বাতিল ঘোষণা করা হয়।
আবার একই কারণে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের দুই লাখ ৬৩ হাজার বই বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া নোয়াখালীর চৌমুহনীর ‘অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস’ এবার কেবল মাধ্যমিক স্তরেই প্রায় ৭৮ লাখ বই ছাপার কাজ পেয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি নিম্নমানের কাগজ দিয়ে বই ছাপায় ১২০ মেট্রিক টন কাগজ বাতিল করেছে এনসিটিবি। এভাবে মোট অপচয় হয়েছে প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন কাগজ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, সরবরাহ করা বইয়ের মধ্যে কিছুসংখ্যক বই মানসম্মত নয় বলে মাঠ পর্যায় থেকে জানা গেছে। যেমন কোনো বইয়ের কাগজের মান ভালো নয়, আবার কোনো কোনো বইয়ের মুদ্রণ সঠিকভাবে হয়নি।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা জানান, প্রিন্ট ও কাগজের মান খারাপ থাকলে সেসব বই আমরা বাতিল করে দেই। এ রকম সমস্যা প্রতিবছর থাকে। তখন তাদের আমরা এসব ঠিক করে দিতে বলি। যদি বই দিতে দেরি হয়, তখন তাদের জরিমানা করা হয়। ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই কম খরচে বেশি লাভ করতে চান। মান যাচাইয়ের কাজটিও উন্নত হয়নি।
তবে এনসিটিবির সামর্থ্য বাড়িয়ে এই সমস্যার অনেকটা সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ তৌহিদুল হক।
এর আগে ২০১৬ সালে বই ছাপার সময়েও সংকট হয়েছিল। তখন প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপতে দেশের ২২ মুদ্রাকর ও প্রকাশক বিদেশি প্রকাশনা সংস্থার অংশগ্রহণ ঠেকাতে জোট বেঁধেছিলেন।তখন তাঁরা ৩২ থেকে ৪১ শতাংশ কম দরে দরপত্র জমা দিয়ে বই ছাপার কাজ পান। পরে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেওয়ার পর দেখা যায় মান খারাপ।