লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাট কালীগঞ্জ উপজেলায় বাবার কবিরাজি চিকিৎসার কারণে যৌন ক্ষমতা হারিয়েছে এমন ক্ষোভ থেকে নিজের পিতাকে খুন করেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। অবশেষে চার বছরের তদন্ত শেষে ক্লুলেস এই হত্যা মামলাটির রহস্য উদঘাটন করে খুনিকে গ্রেফতার করেছে লালমনিরহাট সিআইডি।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২ জুন) দুপুরে লালমনিরহাট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় জেলা সিআইডির সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সিআইডির এ সংবাদ সম্মেলনে লালমনিরহাট সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার ইসমাইল (পিপিএম বার) সিআইডি ইন্সপেক্টর মোঃ আজিমুদ্দিন, সাব-ইন্সপেক্টর জাহিদসহ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা (সিআইডির) অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ ইসমাইল পিপিএম (বার) বলেন, ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই কালিগঞ্জ উপজেলার নিথক অচিনতলা এলাকায় গভীর রাতে নিজ শয়নকক্ষে খুন হন গোলাম হোসেন (৪০)। তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলায়, কাধে, ঘাড়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতের বড় ছেলের দায়ের করা মামলায় তদন্ত কাজ শুরু করলেও কোন রহস্য খুঁজে পাওয়া যায়না। দীর্ঘ চার বছরে ৬ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা ক্লুলেস মামলাটির রহস্য উদঘাটন করতে পারেননি। তবে এ বছরের মার্চে ৭ম তদন্ত কারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) জায়েদুল ইসলাম জাহিদ। দায়িত্ব নিয়ে এই মামলার সন্দিগ্ধ আসামী গোলাম হোসেনের দ্বিতীয় ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে গত ১০ এপ্রিল আটক করে আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে সুকৌশলী জিজ্ঞাসাবাদে তার পিতাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন সে।
সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীরের স্বীকারোক্তির বরাতে জানানো হয়, তার বাবা ২০০৯ সালের দিকে কবিরাজি চিকিৎসায় তার যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে দেন। পরের বছর বিয়ে করলে বাসর ঘরে তিনি বুঝতে পারেন তার যৌন ক্ষমতা নাই। সেই থেকে স্ত্রীর সাথে এই বিষয়টি নিয়ে মনোমালিন্য শুরু হয়। দীর্ঘ আট বছরের সংসার জীবনে অক্ষমতা নিয়ে স্ত্রীর সাথে কলহ, বিরোধ লেগে থাকলে পিতার প্রতি ক্ষোভ তৈরি হতে থাকে। এক পর্যায়ে তাকে হত্যা করলে যৌন ক্ষমতা ফিরে পাবেন মনে করে পরিকল্পনা করতে থাকেন। ঘটনার দিন স্ত্রী ঢাকায় গার্মেন্টস এ থাকায় এবং হালকা বৃষ্টিতে রান্না ঘর থেকে দা নিয়ে গিয়ে তার বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করেন। বাবার লাশ বাড়ির পাশে গর্ত করে লুকিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করলেও পিতার গোঙানিতে বড় ভাই ও ভাবি আসলে তিনি আর মরদেহ লুকাতে পারেননি। পরক্ষনে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন খুনি বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।