প্রদীপ কুমার দেবনাথ, নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি: নরসিংদী সদরে এক মাদ্রাসা ছাত্রের উপর শিক্ষক কর্তৃক মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষকের ব্যাপক প্রহারে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে এক শিক্ষার্থী। এতে অভিভাবক ও সচেতন জনতা ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেছে। তারা এ জঘন্যতার বিচার দাবি করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
ঘটনাটি ঘটেছে শহরের বৌয়াকুড় মেরাজুল উলুম মাদ্রাসায়। ঐ মাদ্রাসার হাফেজি পড়ুয়া ছাত্র ইব্রাহিম (১৩) এর উপর পাশবিক নির্যাতন চালায় শিক্ষক হাফেজ রফিকুল ইসলাম। প্রচণ্ড বেত্রাঘাতের এক পর্যায়ে শ্রেণী কক্ষের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে ইব্রাহিম। এরপরও শিক্ষক রফিকুল ইসলামের নির্যাতন থামেনি। পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের বেত্রাঘাতের মাধ্যমে রক্তাক্ত করে দেয় তাকে। অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে শিক্ষার্থী ইব্রাহিম। খবর পেয়ে ইব্রাহীমের মা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ছেলেকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রায়পুরা উপজেলার হাইরমারা ইউনিয়নের বীরকান্দি গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী শফিকুল তালুকদারে ছেলে ইব্রাহিম। কোরআনে হাফেজ পড়ানোর উদ্দেশ্যে বৌয়াকুড় মেরাজুল উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি করেন ছেলেকে।ইব্রাহিম স্বভাবতই নিরীহ তবে মেধাবী। ঘটনার দিন গত ২১ আগস্ট সকালে বেয়াদবির অভিযোগ এনে শিক্ষক রফিকুল ইসলাম শিক্ষার্থী ইব্রাহিমের উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। প্রবাসী পিতার অবর্তমানে মা মুরশিদা বেগম প্রতিকার চেয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষসহ এলাকাবাসীর কাছে এই নির্যাতন অত্যাচারের বিচার দাবী করেন।এ সময় উপস্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠলে তাদের শান্ত করতে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় ঘটনার মীমাংশার আশ্বাস আশ্বাস দেওয়া হয়।
তাৎক্ষণিক নির্যাতনকারী শিক্ষক হাফেজ রফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে মাদ্রাসা কতৃপক্ষ। পরবর্তীতে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের নিয়ে সালিশের মাধ্যেমে ঘটনার মিমাংসা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।সালিশে না বসেই মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী ও সেক্রেটারী শওকত আলী মুন্সী মিলে সালিশ ছাড়াই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক ও এলাবাসীকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে কিশোর নির্যাতনকারী শিক্ষক হাফেজ রফিকুল ইসলামকে পুন:বহাল করে।প্রিন্সিপাল এর এহেন আচরনে অভিভাবক ও এলাকীবাসী ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীর উপর শারীরিক ও মানষিক নির্যাতনের বিষয়ে সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও বিধি নিষেধ রয়েছে। কিন্তু সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়েও তা তারা মানেনি। শিশু ও কিশোর নির্যাতনকারী ছাত্র পেটানো শিক্ষক হাফেজ রফিকুল ইসলামের উপযুক্ত বিচার দাবী করেন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে তারা নির্যাতনকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে নির্যাতিত ছাত্র ইব্রাহিমের অসহায় মা মুরশিদা বেগমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্বাক্ষর এই জন্য নেয়া হয়েছে, যাতে ইব্রাহিমের মা কোন অভিযোগ ও আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারে। স্বাক্ষরের বিষয়টি পরে মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে প্রিন্সিপালের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা যায়নি।