উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস বাংলাদেশের কাছে তাদের তৈরি উড়োজাহাজ বিক্রির যে প্রস্তাব জমা দিয়েছে, তা মূল্যায়নের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান।
বাংলাদেশে সফররত এয়ারবাস ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এয়ারবাস গ্রুপের নির্বাহী কমিটির সদস্য ওয়াটার ভ্যান ওয়ার্শের সঙ্গে এক বৈঠকের পর মন্ত্রী এই তথ্য জানান।
বুধবার (১৫ মে) সচিবালয়ে মন্ত্রীর দপ্তরে এ বৈঠক হয়। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসডুপে এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশের ফ্লিট সম্প্রসারণের জন্য আমরা নতুন উড়োজাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে এয়ারবাস তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
সেই প্রস্তাবটি মূল্যায়নের জন্য বিমানে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাওয়ার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে বোয়িং কোম্পানিও তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এটিও যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি করা হবে। বাংলাদেশ ও বিমানের জন্য যেটি ভালো হবে সেটিই করা হবে।
বৈঠকে বিমানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের এভিয়েশন শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণে কাজ করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা বাংলাদেশকে একটি অন্যতম প্রধান এভিয়েশন হাবে রূপান্তরের জন্য কাজ করছি।
সেই লক্ষ্যে সারা দেশের সব বিমানবন্দরের উন্নয়ন নিশ্চিতের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্সের ফ্লিট সম্প্রসারণ, মানবসম্পদের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ চলমান।
এভিয়েশন শিল্প মানে শুধুই উড়োজাহাজ বা বিমানবন্দর নয় উল্লেখ করে প্রতিনিধি দলকে ফারুক খান বলেন, এর অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো দক্ষ মানবসম্পদ। আমরা দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি এবং তাদের নিয়মিত ও যথাযথ প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্ব দিচ্ছি। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে একটি এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এ ছাড়াও এভিয়েশন শিল্পের উপর প্রশিক্ষণ দিতে আমাদের কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমরা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাই, যাতে এভিয়েশন শিল্পের সঙ্গে জড়িত সব প্রশিক্ষণ ভবিষ্যতে বাংলাদেশেই দেওয়া সম্ভব হয়। এয়ারবাসের এখানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
বৈঠকে এয়ারবাসের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রশংসার দাবি রাখে। বাংলাদেশের এভিয়েশন শিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত। একটি টেকসই এভিয়েশন শিল্প নিশ্চিতে এয়ারবাস বাংলাদেশের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে আবদ্ধ হতে চায়।
তিনি আরও বলেন, কারিগরি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি এভিয়েশন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ধরনের কর্মীদের এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রশিক্ষণ সহায়তা দিতে এয়ারবাস আগ্রহী। এ জন্য বাংলাদেশের এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও আমরা কৌশলগত অংশীদারিত্ব তৈরি করার কাজ করছি। বাংলাদেশকে একটি এভিয়েশন হাবে রূপান্তরের যে কাজ শুরু হয়েছে, সেই ভিশনকে বাস্তবে রূপান্তরের জন্য এয়ারবাস অংশীদার হতে চায়।
উল্লেখ্য, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টিই মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের তৈরি। আর ড্যাশ-৮ মডেলের পাঁচটি কানাডার ডি-হ্যাভিল্যান্ডের। তবে গত বছর ফ্রান্সের উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস বাংলাদেশে তাদের তৈরি উড়োজাহাজ বিক্রির প্রস্তাব দেয়। প্রতিষ্ঠানটি থেকে কার্গোসহ ১০টি উড়োজাহাজ কেনার আলোচনা শুরু হয়। পাশাপাশি বোয়িং কোম্পানিও তাদের উড়োজাহাজ বিক্রির প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশকে।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম