কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ উত্তরাঞ্চলের মৎস্য ও শষ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ের সাহাগোলা-আহসানগঞ্জ রেলওয়ে ষ্টেশানের পশ্চিম পাশ দিয়ে নির্মাণাধীন নবনিমিত আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ আঞ্চলিক মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে তিন জেলার প্রায় ছয় উপজেলার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। পাশাপাশি তরাম্বিত হবে আথ-সামাজিক উন্নয়ন ব্যবস্থা। কৃষিপণ্য সরবরাহ সহজ হওয়াসহ নওগাঁ থেকে ঢাকার সাথে সড়ক যোগাযোগ প্রায় ষাট কিঃমিঃ কমে যাবে।
সড়কটি নওগাঁর ঢাকা মোড় থেকে শুরু করে রাণীনগর-আত্রাই (আহসানগঞ্জ) রেল লাইনের পার্শ দিয়ে রাণী ভবানীর স্মৃতি বিজড়িত শহর নাটোর শহরে পৌঁছবে। প্রায় ২৯ কিঃমিঃ পাকা করণ কাজের কিছু অংশ বাঁকি থাকলেও ইতি মধ্যে বিভিন্ন এই নব-নির্মিত আঞ্চলিক মহা সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু করেছে। আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন না হলেও এই জনপদের মানুষরা প্রতিনিয়ত সরাসরি নানা যানবাহনে নওগাঁর ঢাকা মোড় থেকে শুরু করে রাণী নগর-আত্রাই, বীরকৎসা, মাধনগর, নলডাঙ্গা, বাসুদেবপুর হয়ে স্বল্প সময়ে নিজেদের প্রয়োজনে কম খরচে জেলা শহর নাটোরে যাতায়াত করছেন।
এই মহাসড়ক এলাকার স্থানীয়রা বলছেন, নব-নিমিত“ আঞ্চলিক মহাসড়ক” বিনোদন প্রেমীদের জন্য বিনোদনের একটি নতুন স্পটে পরিনত হয়েছে। নব-নির্মিত আঞ্চলিক মহা সড়কের কিছু কিছু জায়গায় কাপেটিংয়ের কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় সড়কের ধুলো-বালির কারণে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্চে এই সড়কের পথ চলা মানষের।তারপরও এই সড়কে চলাচল করতে পারায় নিজেরা স্বস্থি প্রকাশ করছেন।
নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরেই বাঁকি কাজ গুলো সম্পন্ন করে জন সাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
জানা গেছে, ২০০১সালে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই সড়কটি নির্মাণ কাজের জন্য সেই সময়ে নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ ও গৃহায়ন ওগণপূত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির নওগাঁর ঢাকা রোড নামক স্থানে নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। সেই মোতাবেক কিছু কাজ শুরু হলেও রাজনৈতিক নানা জটিলতার কারণে তা ফাইল বন্দী হয়ে পড়ে। এরপর ঢাকা রোড় থেকে রাণীনগর রেলওয়ে ষ্টেশন পর্যন্ত আট কিঃমিঃ সড়কের কাজ অনেক আগেই পাকাকরণ করা হয়। পরে অনেক জটিলতা কাটিয়ে নওগাঁ-৬ আসনের প্রয়াত এমপি ইসরাফিল আলম ২০১৮ সালে পূনঃরায় রাণীনগর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে আত্রাই হয়ে নাটোর জেলার সীমানা পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কের নিমান কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
এরপর থেকে এই সড়কের নির্মান কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলায় যা এখন এলাকা বাসীর কাছে দৃশ্যমান। এই সড়কটি নাটোর বাইপাস সড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে। পুরো সড়কে আটটি ব্রীজ ও পনেরটি কালভাট নির্মাণ কাজ ইতি মধ্যেই প্রায় শেষ হয়েছে। বর্তমান সড়কের উপরিভাগের কাজও শেষের দিকে। কিছু কিছু জায়গায় শুধু মাত্র কাপেটিং এর কাজ বাঁকি আছে।
এই মহা-সড়কের নির্মান ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় দু,শ কোটি টাকা। পুরো প্রকল্পটিকে চারটি ফেজে ভাগ করে চারটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছেন। নওগাঁ- নাটোর আঞ্চলিক সড়কটির নির্মাণ কাজের দেখভাল করছেন নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। উপজেলার মহাদিঘী গ্রামের বাসিন্দা হামিদুল হক বাবু, আবু হান্নান মন্ডল, সাহাগোলা গ্রামের বিলকিছ বেগম, ভূট্টো, আবু জহিদ ডালিমসহ অনেকে জানান, খুব দ্রুত গতিতেই মহাসড়কের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়। ইতি মধ্যে আমরা কম খরচে অল্প সময়েআত্রাই-মাধনগর হয়ে বিভিন্ন যানবাহনে নাটোর যেতে পারছি। মাঝে মধ্যে কিছু কাজ বাঁকি থাকায় আমাদের অসুবিধা হচ্ছে। এই কাজগুলো সম্পন্ন করা হলে আমরা আরো ভালো ভাবে দ্রুত চলাচল করতে পারবো।
নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান জানান, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষে বতমানে কাজ চলমান রয়েছে। সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক প্রকল্পের আর সময় বাড়ানো হবে না। কাজের সিডিউল মোতাবেক সঠিক ভাবে কাজ সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলেকে কঠোর ভাবে হুশিয়ারী প্রদান করা হয়েছে।সড়কটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে এই জনপদের মানুষের ব্যবসা বানিজ্যসহ অথনৈতিক জীবণ যাত্রার মান উন্নয়ন হবে।
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর)আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন হেলাল জানান, নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক সড়কের নির্মাণ কাজ অনেক আগে থেকেই চলছে। ইতি মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়। এই সড়কটি পুরোদমে চালু হলে এলাকাবাসী পাবে একটি চলাচলের আধুনিক সড়ক। যার মাধ্যমে রাণীনগর-আত্রাইয়ের লোকজন অল্প খরচে কম সময়ে নাটোর হয়ে রাজধানী ঢাকায় যেতে পারবে।পাশা পাশি ব্যবসা-বানিজ্য সহ নানাবিধ উন্নয়নের প্রসার ঘটবে।