তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: সারাদেশের মতো মৌলভীবাজারেও প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের বাজারের দ্রব্যমূল্যর দাম বাড়ছে লাগামহীন ঘোড়ার মতো। সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস হয়ে উঠছে। বাজারে গিয়ে পছন্দের জিনিস কেনা দূরের কথা একান্ত প্রয়োজনীয় দ্রব্যটি কিনতে হিমসীম খাচ্ছেন চাকুরীজীবী ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তাব্যক্তিরা।
আর নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা আরো করুণ। তাদের পক্ষে এখন কোন মতো দুবেলা খেয়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলায় গুটি কয়েক মানুষ ছাড়া ৯০ ভাগ মানুষের অত্যন্ত কষ্টে দিনাতিপাত পার করছেন। এই মানুষগুলোর অসহায়তা ও চাপা কান্না যেন কেহ শুনতে পাচ্ছেন না।
বাজারে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে যাদের আয় সীমিত তারা স্বাচ্ছন্দ্যে কোনও কিছুই কিনতে পারছেন না। বাজারে এখন বেশিরভাগ সবজির কেজি ৫০ টাকার ওপরে। শুধু আলু, কচু, মুখী ও পেঁপের কেজি ৫০ টাকার নিচে।
প্রতিদিন যে জিনিসটি না হলেই নয় সেই চাল প্রতি কেজি ৫০ টাকার নিচে নেই। চিকন ও মাঝারি চালের দাম ৭০-৭৫ টাকা। কাঁচা মরিচ ২২০-২৫০ টাকা কেজি। এমন পরিস্থিতিতেও নতুন করে বেড়েছে চাল, আটা, পেঁয়াজ, ময়দাসহ অন্তত এক ডজন পণ্যের দাম। করোনা কালে প্রয়োজনীয় কাপড় কাচার সাবান, গায়ের সাবানের দাম বেড়েছে ৭-১০ টাকা প্রতিটিতে। আর গুড়া সাবানের প্যাকেটে বেড়েছে প্রকার ভেদে ১০-১৫ টাকা।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মৌলভীবাজারের বাসিন্দা সঞ্জিত দাস, অবিনাশ সেন বলেন, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে আমাদের তিন বেলা মোটামোটিভাবে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পরেছে। তাঁরা বলেন, একদিকে বেতন সীমিত, অন্যদিকে সাংসারিক ব্যয় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বিশেষ করে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সাবানের দামও বেড়েছে অনেকগুণ। করোনাকালে পুষ্টিকর খাবার কথা বলা হচ্ছে অথচ বাজারে মাছ, মাংস এমনকি ডিমের হালি ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। কিভাবে বাঁচব পরিবার নিয়ে সেই দু:চিন্তায় আছি।
শুধু সঞ্জিত দাস, শফিকুর রহমানই নন বর্তমান বাজারে প্রতিটি দ্রব্যের ক্রয়ের সক্ষমতা হারাতে বসেছে সাধারণ মানুষ। উপার্জনের সঙ্গে মিল অমিলের হিসেব কষতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে এ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভোক্তারা। জীবন যুদ্ধের এসে অনেকে হারমানা না মানার প্রশ্নে বিতর্কে জড়ালেও শেষ অবধি তারা হারমানতে বাধ্য হন দ্রব্যমূল্যের জায়গায় এসে।
কুলাউড়ার স্কুল শিক্ষক বোরহান উদ্দিন, সেলিম আহমদের মতে শুধু নিত্যপণ্যই নয়, এর বাইরেও ব্যয় বাড়ছে। বছর ঘুরলেই বাসা ভাড়া বাড়ছে, বিদ্যুতের দাম-গ্যাসের দাম বাড়েছে। বাচ্চারা বড় ক্লাসে উঠছে আর টিউশন ফি বাড়ছে। একের পর এক খরচের লাগাম বাড়ছে বৈকি, কমছে না। অন্তত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের বিষয়টির দিকে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারী থাকলে সাধারণ মানুষের কষ্টের বোঝা কিছুটা হলেও লাঘব হতো।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক দু’সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে ৭ টাকার বেশি। গত সপ্তাহে যে ময়দা ৩৫ টাকা কেজি পাওয়া যেতো, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়। আটা ৩২-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা দুই মাসের বেশি সময় ধরে বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দাম। ১১০ টাকা কেজির ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা দরে। তাদের মতে দুই মাসের বেশি সময় ধরে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম বেড়েছে। খাদ্যের দাম বেড়েছে। এ কারণে ব্রয়লার মুরগির ও ডিমের দামও বেড়েছে।
জেলার পাইকারী বাজার শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের তথ্য বলছে, নতুন করে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৮ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। গত সপ্তাহে ৪০ টাকা কেজি দরে যে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন, তা আজ বিক্রি করছেন ৪৮ থেকে ৬০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে তারা আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৪২ টাকা কেজি দরে। এই সপ্তাহে বিক্রি করছেন ৬০ টাকা কেজি দরে।
আর চিনি প্রতি কেজি ৮৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জেলার পাইকারী বাজার ও খুচরা বাজার কোনটিতে নেই কোন মূল্য তালিকা। বিক্রেতার ইচ্ছে অনুসারে ক্রেতাকে দ্রব্য কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।
একমাত্র ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের একজন সহকারি পরিচালক জেলার সাতটি উপজেলায় তদারকি অভিযান চালান। আর কোন দপ্তরের নজরদারী নেই জেলার বাজারগুলোতে। ফলে ক্রেতারা অনেকটা জিম্মি হয়ে পরেছেন বাজারের অসাধু বিক্রেতাদের কাছে।
এদিকে প্রায় প্রতিটি বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে। ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মুলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বাঁধাকপি মাঝারি সাইজের এক পিস ৭৫-৮০ টাকা, ফুলকপি ছোট ৫০ টাকা, শিম ১৫০ টাকা, বেগুন ৭০-৮০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, আলু ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, দেড় কেজির ইলিশ ১৮০০-২০০০ টাকা কেজি, এক কেজির ইলিশ ১২০০-১৫০০ টাকা কেজি, ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১১০০-১৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। রুই মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০, কাতল মাছ ২৯০ থেকে ৩২০, কৈ ২০০, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ১৬০, শিং ৪৫০ থেকে ৬০০, পাঙ্গাস ১৪০ থেকে ১৫০, ও পাবদা ৩০০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।