শিক্ষা ডেস্কঃ মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে আজ। দীর্ঘদিন পর ফের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস।
আজ রোববার সকাল থেকে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র মধুর ক্যান্টিন, ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া, লাইব্রেরি চত্বর, মল চত্বর, হাকিম চত্বর শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় সরগরম হয়ে ওঠে। ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে দীর্ঘদিন পর আবার শোনা যায় মিছিলের শব্দ।
এর আগে শনিবার (১৬ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে রবিবার সশরীরে ক্লাস শুরুর কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রবিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাস্থ্যবিধি’ মেনে সশরীরে পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে। তবে সশরীরে ক্লাসের পাশাপাশি কোনো বিভাগ বা ইনস্টিটিউট চাইলে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ ক্লাস অনলাইনে নিতে পারবে।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অনলাইন ও অফলাইন সমন্বয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৬০ ভাগ ক্লাস সশরীরে নিতে হবে। সেশনজটে কাটাতে ৬ মাসের সেমিস্টার চার মাসে সম্পন্ন করার কথাও বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে মানতে হবে বেশ কিছু নিয়ম। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‑
>> সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়মিত ও সার্বক্ষণিক মাস্ক নাক-মুখ ঢেকে পরিধান করতে হবে।
>> স্বাস্থ্যবিধি পালনের জন্য সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
>> স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী পরস্পরের কাছ থেকে কমপক্ষে ১ মিটার (৩ ফুট) শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
>> শ্রেণিকক্ষে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বসার ব্যবস্থা করতে হবে।
>> ল্যাবে কাজের ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরির ধারণ ক্ষমতা, বসার ব্যবস্থা, কাজের বিন্যাস এবং যাতায়াতের পথযুক্ত নকশা তৈরি করতে হবে ও সর্বত্র প্রদর্শন করতে হবে।
>> সব নির্দেশনাবলি শিক্ষার্থীদের আগেই জানাতে হবে।
>> শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে ল্যাবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর অবস্থান চিহ্নিত করতে হবে।
>> ব্যবহৃত পিপিই যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে।
>> পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং শৌচাগারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
>> কোভিড-১৯ লক্ষণ থাকলে বাসা বা হলের কক্ষে থাকতে হবে ও কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
>> লক্ষণযুক্ত ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহনে চলাচলের সময় অবশ্যই সার্বক্ষণিক মাস্ক পরতে হবে।
>> বাসে ওঠার আগে দেহের তাপমাত্রা পরিমাপ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
>> বাস এবং অন্যান্য যানবাহনে প্রবেশ ও বহির্গমন পথে ভিড় এড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
>> যানবাহনে প্রবেশ ও বহির্গমণের জন্য আলাদা দরজা নির্ধারণ করতে হবে।
>> শুধু ক্লাস থাকলেই নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহন ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ এবং প্রস্থান করতে পারবে।
>> সম্ভব হলে গণপরিবহন ব্যবহার পরিহার করতে হবে।
ঢাবি উপাচার্য জানান, তাঁদের পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন তাঁরা। প্রয়োজনে ছুটির দিন শুক্রবারেও ক্লাস নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরতে পেরে তাঁরা উচ্ছ্বসিত। মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস হচ্ছে। তবে দেড় বছর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তাঁরা।
এর আগে গত ৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য শর্ত সাপেক্ষে খুলে দেওয়া হয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী অন্তত এক ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে তাঁদের টিকা কার্ড দেখাতে হবে।