বিনোদন ডেস্কঃ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন লংঘন সহ ‘ভায়োলেন্স’ ও ‘অশ্লীলতা’র অভিযোগ এনে দেশ-বিদেশে মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘হাওয়া’ সিনেমার প্রদর্শন নিষিদ্ধে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার (২১ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার সেন্সর বোর্ড বরাবর এ নোটিশ দেন।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে ,নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া না হলে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এতে ‘হাওয়া’র ছাড়পত্র বাতিল করে দেশে ও বিদেশে প্রচার, সম্প্রচার ও প্রদর্শন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি করা হয়েছে। সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন করে এর সদস্য হিসেবে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সদস্য, আইনজীবী ও পরিবেশবিদদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয় নোটিশে। এতে আরও বলা হয়, ভবিষ্যতে কোনো সিনেমার ছাড়পত্র দেয়ার আগে এতে খুনের দৃশ্য, অশ্লীল গালি এবং বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২-এর কোনো ধারার লঙ্ঘন যেন না হয়, সে বিষয়ে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে।
নোটিশকারী আইনজীবী বলেন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড এর ছাড়পত্র পেয়ে গত ২৯ জুলাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে মুক্তি পাওয়া মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘হাওয়া’ সিনেমায় ট্রলারে থাকা একটি খাঁচায় শালিক পাখি বন্দী অবস্থায় দেখা যায়। এক পর্যায়ে সেটিকে হত্যা করে খাওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়েছে। ‘হাওয়া’ সিনেমার কয়েকটি দৃশ্য রয়েছে যা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, ২০১২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে। বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত এ ধরনের অপরাধের ফলে সাধারণ মানুষ পাখি শিকার, খাঁচায় পোষা ও হত্যা করে খাওয়ায় উৎসাহিত হবে। এই দৃশ্য ধারণের জন্য বনবিভাগের কোনও অনুমতিও নেয়া হয়নি। বন্যপ্রাণী হত্যা এবং খাওয়ার দৃশ্য দেখে মানুষ মনে করতে পারেন যে, এটা করা যায়। তারা এগুলো দেখে উৎসাহিত হতে পারেন। সিনেমা নাটকে ধূমপানের দৃশ্যে যেমন লেখা থাকে যে, এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, কিন্ত ‘হাওয়া’ সিনেমার ওই অংশে এই ধরনের কোনও বার্তা ছিল না। ইতিমধ্যে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের চার কর্মকর্তা ‘হাওয়া’ সিনেমাটি দেখে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ এর ধারা ৩৮(১), ৩৮(২), ৪০ ও ৪৬ ধারা লঙ্ঘনের সত্যতা পেয়ে ১৭ আগস্ট বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
এছারা, সিনেমাটিতে বেশ কয়েকটি খুনের দৃশ্য রয়েছে যা অতি ভয়ংকর তথা ভায়লেন্স পূর্ণ। পুরো ‘হাওয়া’ সিনেমায় নারী চরিত্রকে নেতিবাচক হিসেবে তুলে ধরার পাশাপাশি অসংখ্য অশ্লীল গালি ব্যবহার করা হয়েছে। যা পরিবার এর সদস্যবৃন্দ বিশেষ করে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দেখা মোটেও উচিত নয়। এহেন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিশু-কিশোররা, তরুণ-তরুণীরা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। যা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অথচ ‘হাওয়া’ সিনেমার কোথাও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দেখা নিষেধ এই কথাটিও উল্লেখ নাই। এই ধরনের চলচ্চিত্র শুধু বাংলাদেশেই নয় বর্হিবিশ্বেও প্রচার, সম্প্রচার ও প্রদর্শন হলে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জম্ম দিবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেক্ষ্য, গত বুধবার (১৭ আগস্ট) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলাটি করা হয়। নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে করা মামলায় বাদী হয়েছেন বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নারগিস সুলতানা। সাক্ষী করা হয়েছে তদন্ত কমিটিতে কাজ করা অন্য তিন সদস্য আবদুল্লাহ আস সাদিক, অসীম মল্লিক ও রথিন্দ্র কুমার বিশ্বাসকে।