বাংলাদেশের উত্তরের জেলাগুলোতে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ ৩৪টি নদ-নদীতে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শনিবার বিকেল নাগাদ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, ধরলা ও তিস্তার পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্রুত গতিতে বাড়ছে ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও।
প্রথম দফা বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চরাঞ্চলসহ নদ-নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী মানুষজন। এর সঙ্গে করোনা মহামারির দুশ্চিন্তাতো রয়েছেই।
স্থানীয়রা জানান, গত ২৪ ঘণ্টার ভারি বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে তিস্তার ও ধরলার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা ক্রমেই কমে গিয়ে বন্যার উন্নতি ঘটে। কিন্তু এক সপ্তাহ না যেতেই ফের উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তার পানি বেড়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে এবং ধরলা নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে।
বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ভারতের গজলডোবার সবক’টি গেট খুলে দেয়া এবং বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারণে ভাটিতে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ রংপুর অঞ্চলের ৩৪টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ জানিয়েছেন, তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ব্যারেজ প্রকল্পের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়ে ব্যারেজ রক্ষার চেষ্টা হচ্ছে।
নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। যা শনিবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৫২ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার)। চলতি বন্যায় তিস্তা নদীর এটাই সর্বোচ্চ পানি প্রবাহের রেকর্ড।
পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারি, রংপুরের গংগাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, চিলমারী এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সদর ও ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তা অববাহিকার ৬৫টি ইউনিয়নের ২৪০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলে হু হু করে ঢুকছে পানি।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। অনেক মৎস্য খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ফসলের ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানির শঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।