ইদানীং কারো সাথে কথা হলেই একটি কথা প্রায়ই বলতে শুনি -‘ দেশের অবস্থা কিন্তু ভালনা’। দেশের অবস্থা এর আগে কোন সময় ভাল ছিল জানিনা। দেশের কোন অবস্থাটি ভালো না তা তারা বলেন না। রাজনৈতিক সচেতন কেউ হলে বলেন -‘দেশে গণতন্ত্র নেই’। কোন আমলে কবে দেশে গণতন্ত্র ছিল বলেন না।দেশের অবস্থা ভালো না বলছি, অথচ বিদেশী ভিন্ন ভিন্ন পর্যবেক্ষকরা বলছেন বাংলাদেশ এখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে সব সূচকে। ভারত, পাকিস্তানের বিশ্লেষকরা তথ্য দেখিয়ে প্রমাণ দেখাচ্ছেন, বাংলাদেশ তাদেরকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ এখন আর দরিদ্র দেশ নেই। তাহলে বাংলাদেশের মানুষ দেশ ভাল নেই বলছে কেন? এক বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ( নামটি উল্লেখ করলাম না ) প্রায়ই বক্তৃতায় বলতেন -‘বেশী ভাল ভালনা’। তাহলে কি এখন সেই ভালো নাই বলছে সবাই?
অবশ্য চোর ডাকাত আর দুর্নীতিবাজদের জন্য আসলেই দেশ এখন ভাল যাচ্ছেনা। আগে যারা চুরি ডাকাতি করে অবৈধ ধনসম্পদের মালিক হয়েছে, তারাও এখন ভয়ে আছে। কে কখন কিভাবে ধরা পরে সেই ভয়ে ঘুমাতে পারছেনা। চাঁদাবাজী, জমি দখলদারি আর ঘুষ বানিজ্যের রথি মহারথিরাও এখন শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। সাধু শয়তানদের মুখোশ উম্মেচিত হচ্ছে। অর্থ পাচারকারীরাও বিদেশে বসে দিন গুণছে কবে কার ডাক পড়ে। উচ্চাসনে বসে থাকা ক্ষমতাবান সমাজপতিরা চেহারা লুকাচ্ছে। তাদের জন্য দেশ এখন আসলেই ভালো নেই। তবে দেশের সাধারণ মানুষগুলি খুব ভাল আছেন। অভাবনীয় উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেশের চেহারা পালটে দিয়েছে। করোনায় বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা ভাব বাংলাদেশে প্রভাব ফেলতে পারেনি। দীর্ঘ বন্যা আর করোনায় দেশের উৎপাদন ব্যাহত হয়নি। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। তিস্তার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে। ভোলা সেতু নির্মাণের প্রাথমিক পরিকল্পনা শেষ হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ৩০ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে দেশ এখন খাদ্য রপ্তানির পথে। ছোট ছোট উদ্যোক্তা এবং কুটির শিল্পগুলি বিদেশের বাজার ধরেছে। উৎপাদিত হচ্ছে রাজস্ব। ৫০ বছরে দেশের এই অবস্থান অন্য কোন সময় কেউ দেখেছে মনে হয়না। যারা -‘দেশ ভাল নেই’ বলছে তাদের কাছে দেশ ভাল না থাকাই যথার্থ।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
টরন্টো, কানাডা
১৪ নভেম্বর ২০২০।