মোঃ খোরশেদ আলম( কুমিল্লা প্রতিনিধি) ঃ
দেবীদ্বারে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের ঝগড়ার সময় মাজেদুল ইসলাম মাঞ্জু মিয়া (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। হত্যা না স্বাভাবিক মৃত্যু এ নিয়ে রয়েছে দু’পক্ষের মত বিরোধ। এক পক্ষের দাবী, মাঞ্জুমিয়াা হার্ট এটাকে মৃত্যু হয়েছে, কেউ তাকে মারেনি, ঝগড়ার সময় সে ঘটনাস্থলেও ছিলেন না। অপরপক্ষ বলছেন, ঝগড়া মেটাতে গেলে প্রতিপক্ষের ঘূষি এবং লাঠির আঘাতে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনাটিকে একটি প্রভাবশালী মহল হার্ট এটাকে মৃত্যু বলে চালিয়ে দিয়ে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের নিকট হস্তান্তরের চেষ্টা করেছিল। তবে পুলিশ বলছে কারোর আঘাতে কিংবা ঝগড়ার সময় সে মারা যায়নি, সে হার্টএটাকে মারা গেছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার সকাল ৬টায় উপজেলার রসুলপুর গ্রামের ভূঁইয়া দিঘীরপাড়।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকাল অনুমান ৬টার সময় দিঘীতে বিষ ঢেলে মাছ ধরার সময় মিজানুর রহমান(২২) নামে এক যুবকের সাথে মাজেদুল ইসলাম মাঞ্জু মিয়া’র পুত্র মামুন ও রুবেল’র ঝগড়া হয় এক পর্যায়ে মিজানের লাঠির আঘাতে রুবের আহত হয়। এ সময় মাজেদুল ইসলাম মাঞ্জু মিয়া তাদের ঝগড়া মেটাতে গেলে মিজানের ঘূষি ও লাঠির আঘাতে মাঞ্জু মিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যায়। মামুনের চাচাতো ভাই রাজিব সহ কয়েকজন মাঞ্জুমিয়াকে বাড়িতে নিয়ে আসেন পরে আশংকাজনক অবস্থায় দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাঞ্জু মিয়াকে মৃত ঘোষনা করেন। এসময় অচেতন মাঞ্জু মিয়ার স্ত্রী সাহেরা খাতুন(৫৫)কে দেবীদ্বার শিশুমাতৃ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। জ্ঞান ফিরে আসার পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় জানান, আমার স্বামীকে মিজান ঘুষি ও লাঠি দিয়ে আঘাত করলে মাটিতে পরে যায়। আঘাতের কারনে পায়খানা করে দেয়। পরে আমি যেয়ে লোকজনের সহযোগীতায় তাকে ময়লা কাপড় ছাড়িয়ে পরিস্কার কাপড় পড়ানোর ব্যবস্থা করে দেবীদ্বার হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করি।
স্থানীয়দের সাথে এ বিষয়ে কথা বলার সময় সবাই চাপাস্বরে কথা বলেন, এমনকি পুলিশের উপস্থিতিতে নিহতের স্ত্রী সাহেরা খাতুনও বলেন, আমার স্বামীকে কেউ মারেনি, সে হার্টএটাকে মারা গেছেন। এসময় এলাকার প্রভাবশালী লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
নিহতের পুত্র আহত রুবেল পুলিশের নিকট স্বাক্ষ্য দেয়ার সময় সে জানায় মিজান তার উপর হামলা চালিয়ে মারাত্মক আহত করে এবং তার বাবা তাকে রক্ষা করতে আসলে তাকে ঘুষি ও লাঠি দিয়ে আঘাত করলে মাটিতে পড়ে যায় এবং পায়খানা করে কাপড় ময়লা করে ফেলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রভাবশালী ইউনিয়ন আ’লীগ নেতা সহ কয়েকজন ব্যক্তি জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশে অর্ধশত মাদক সেবক এবং বিক্রেতা রয়েছেন। যার কারনে এ এলাকাটিকে মাদক পল্লীও বলা হয়। তদের সাথে স্থানীয় প্রভাবশালীদের গভীড় সম্পর্ক রয়েছ। এ এলাকাটি আন্ত:জেলা মাদক ব্যসায়ি মিন্টু মেম্বারের। তার বাড়ির পাশের ঘটনা। নিহত মাঞ্জু মিয়ার দুই পুত্র রুবেল ও মাসুম এবং যার লাঠি এবং ঘুষির আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে সে মিজানও মাদকাসক্ত, যিনি মারা গেছেন তিনিও এক সময় মাদক বিক্রেতা ছিলেন। তারা আরো জানান, নিহতের পুত্র রুবেল যখন হত্যাকান্ডের বিবরণ দেন তখন স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাকে মাদকাসক্ত বলে থামিয়ে দেন এবং পুলিশকে তার বক্তব্য গ্রহন না করতে বলেন। এ হত্যাকান্ডের প্রকৃত সত্য উদঘাটনে নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজন।
দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল আনোয়ার বলেন, সবাই বলেন মাঞ্জু মিয়াকে কেউ মারেনি, হার্ট এটাকে মারা গেছে সে ঘটনাস্থলে ছিলওনা। লাশ ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই বলা যাবে হত্যা নাকি হার্ট এটাকে মৃত্যু হয়েছে।