মোঃ খোরশেদ আলম, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ গেল শুক্রবার মিসকিনদের খাওয়ায়েছি, গতকাল শনিবার থেকে আমরা মিসকিন হয়ে পরের দেয়া খাবার মুখে তুলে নিচ্ছি। আগুন আমাদের স্বর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের রাজধনের বাড়িতে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা কান্না বিজড়িত কন্ঠে এমনটাই উক্তি করেছেন।
তারা আরো জানান অগ্নিকান্ডের লেলিহান শিখার উত্তাপে আমাদের মো. ময়নাল হােসেন মনির(৪৫), মো. আব্দুল লতিফ(৭২) ও আলমগীর হোসেন(৪০)সহ তিন পরিবারের সদস্যরা পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছু নিয়ে বের হতে পারিনি। মো. আব্দুল লতিফ(৭২)’র স্ত্রী রাকেয়া বেগম(৬৫) জানান, শুক্রবার রাত অনুমান ১১টায় পাশের ঘরে পিট পিট শব্দ শুনতে পাই, দেখার জন্য বেড়িয়ে দেখি পিট পিট শব্দের সাথে আগুনে লেলিহান শিখা আকাশ ছুই ছুই। ততক্ষনে সবাই সূর চিৎকার করতে করতে ঘর থেকে বেড়িয়ে আগুনের তাপে আর ঘরের কাছে যেতে পারিনি। জীবন রক্ষার পাশাপাশি যার পড়নে যা ছিল তাই রক্ষা করতে পেরেছি। যে ঘরগুলোতে গতকালও আনন্দ ছিল, আজ সে ঘরে আগুনের পোড়া গন্ধ, আর ঘরে মেঝেতে দাড়িয়ে আছে ক’টি পাকা পিলার।
স্থানীয়রা জানান, সম্ভবত: রাত অনুমান পৌনে ১১টায় আব্দুল লতীফের রান্না ঘরে বৈদ্যুতিক শর্ট শার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। মূহুর্তের মধ্যেই পাকাভিটি ৬টি টিনসেটের ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পাশেই নবনির্মীত পাকা একতালা ভবনটি টিকে থাকলেও ভেতরে অবশিষ্ট আর কিছুই নেই। রাত অনুমান দেড়টায় চান্দিনা থেকে একটি দমকল বাহিনীর দল এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। মো. আব্দুল লতিফ(৭২) জানান, আমার ৩ পুত্র প্রবাসী প্রায় ৩০ বছরের অর্জন আজ পুড়ে শেষ। গত বৃহস্পতিবার ব্যাংক থেকে ৫লক্ষ টাকা উঠিয়ে এনেছিলাম, আজ নতুন ভবনের টাইলস লাগানোর কথা ছিল। গহনা, টাকা, আসবাব সামগ্রী সহ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সম্প্রতি প্রবাসে মৃত: জাকির হোসেন’র স্ত্রী সালেহা বেগম জানান, আমাদের ৩ জা’র প্রায় ২০ ভরি স্বর্নালংকার, নগদ টাকা, ৩টি টিভি, আসবাব সামগ্রী, কাপর চোপড় সবই পুড়ে শেষ, এখন আমরা নিজেরাই ভিক্ষুক।
ঢাকা থেকে আসা মো. ময়নাল হোসেন মনির জানান, আমি ঢাকায় নিপ্পন টিভি কোম্পানীর গাড়ি চালক, বাড়িতে শুধু আমার মা’ মনোয়ারা বেগম(৬৫) এবং মেয়ে মুন্নী(১২) থাকত, শোনেছি আমার রান্না ঘর থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
সুমি আক্তার জানান, রাতে অগ্নিকান্ডের পর সংবাদ পেয়ে টহল পুলিশ দল এসেছিল, সকালে ইউপি চেয়ারম্যান হাজী ময়নাল হোসেন, ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি মো. মজিবুর রহমান, ইউপি মেম্বার আব্দুল কাইয়ুম, বাবুল মিয়া সহ অনেকেই দেখতে এসেছেন। আমাদের ক্ষয় ক্ষতির পরিমান প্রায় কোটি টাকার হলেও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন বলেছেন প্রায় ৫০লক্ষ টাকার ক্ষতি হবে। অগ্নিকান্ড নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইমাম জানান, মোহনপুর ইউনিয়নে একের পর এক ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। বিহারমন্ডলে বোমা বিস্ফোরন, বিহারমন্ডল, ছোটনা, সহ বেশ কটি গ্রামে দূর্ধর্ষ ডাকাতি, সর্ব শেষ তালতলা গ্রামের যে রান্না ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত সে ঘরে এদিন রান্নাও হয়নি, সন্দেহ করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত, বিষয়গুলো নিয়ে প্রশাসনের তদন্তে নামা প্রয়োজন।