তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলায় বন্যায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। গত দুই দিন ধরে দুই উপজেলায় বৃষ্টি না হলেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কবে খুলবে, সে ব্যাপারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
দুই উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের বরাত সূত্রে জানা গেছে, ১৮ জুন থেকে দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যা প্লাবিত হয়ে পড়ে। এতে এসব এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও প্লাবিত হয়ে যায়। কুলাউড়ার ভূকশিমইল, কাদিপুর ও জয়চণ্ডী ইউনিয়নের ৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যা প্লাবিত। এ ছাড়া ১২টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসায় পানি উঠেছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার পানিবন্দী লোকজন ঠাঁই নিয়েছেন।
এ দিকে জুড়ীর সদর জায়ফরনগর, পশ্চিম জুড়ী ও গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের ২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২৫টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা বন্যাপ্লাবিত। সেখানেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
রোববার দুপুরে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, কুলাউড়ার রাবেয়া আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতরে হাঁটুসমান পানি। প্রতিষ্ঠানের একটি ভবনের দোতলায় আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে। সেখানে অন্তত ৩০টি পরিবার উঠেছে।
প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক আবদুস ছালাম বললেন, তিন দিন আগে সামান্য পানি কমেছিল। তবে এরপর থেকে আর কমছে না। নিচতলার শ্রেণিকক্ষ ও অফিসেও এখনো হাঁটুসমান পানি। কবে যে এ দুর্দশা কাটবে, সেটা নিয়ে সবাই চিন্তিত।
কুলাউড়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইফতেখায়ের হোসেন ভূঁইয়া জানান, প্রতিদিনই বন্যা প্লাবিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছ থেকে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে কোথাও পানি কমার খবর মেলেনি।
দুই উপজেলার বন্যা প্লাবিত বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১৫ জন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের এলাকায় বৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানি হাকালুকি হাওরে গিয়ে পড়ে। সেখান থেকে তা সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত কুশিয়ারা নদী দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু, কুশিয়ারা নদীতে এখন পানি বেশি। এ কারণে হাওরের পানি ধীরগতিতে কমছে। এ কারণে দুই উপজেলায় বন্যা প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি নামছে না।
এদিকে জুড়ীর বেলাগাঁও, শাহপুর, নিশ্চিন্তপুর, দীঘলবাগ, তালতলা-খাকটেকা ও হরিরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ-ছয় ফুট পানি দেখা গেছে। এর মধ্যে বেলাগাঁও, শাহপুর ও হরিরামপুর বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
বেলাগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানটি হাকালুকি হাওর ঘেঁষা এলাকায় পড়েছে। এলাকার সব শিক্ষার্থীদের বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু শিক্ষার্থীর পরিবার বিদ্যালয়ের দোতলায় আশ্রয় নিয়েছেন।
জুড়ীর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া তিনি তার বক্তব্যে বললেন, বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো পানি আছে। পানি পুরোপুরি না নামলে সেখানে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব নয়। পানি নেমে গেলে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।